পরিবেশ ও জলবায়ু , গ্রামীণ কৃষি
কৃষি
তীব্র তাপদাহে পুড়ছে উত্তরাঞ্চল, রক্ষা হচ্ছে না ফসল
টানা খরায় পুড়ছে উত্তরাঞ্চল। অতিরিক্তি তাপমাত্রায় বিবর্ণ হচ্ছে খেত-খামারের ফসল। দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন রোগ-বালাই। বাড়তি সেচ দিয়েও ফসল রক্ষায় বেগ পেতে হচ্ছে চাষীদের। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ খরায় হুমকির মুখে পড়তে পারে ফসল উৎপাদন। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির পাশাপাশি বিরুপ আবহাওয়ায় ফসল উৎপাদন এখন বড় চ্যালেঞ্চ উত্তরের কৃষকদের।

মাথার ওপর গনগনে সূর্য প্রকৃতির বুকে যেন আগুন ঢালছে। সূর্যের প্রখরতায় টানা কয়েকদিন ধরেই বাড়তি তাপমাত্রার পারদ। তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জীবন। চারপাশে দেখা দিয়েছে শুষ্ক আর রুক্ষ ভাব। প্রান্তিক খেটে যাওয়া মানুষের জীবনযাত্রায় পড়েছে প্রভাব।

বাদামের জমিতে চাষ করছেন কৃষক জালাল উদ্দিন। ছবি: এখন টিভি

বৈশাখের তপ্ত রোদে বাদাম গাছে মমতার হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন নাটোর সদর উপজেলার মোহনপুর এলাকার কৃষক জালাল উদ্দিন। তীব্র তাপদাহে মলিন হয়ে যাচ্ছে তার খেতের বাদাম গাছ। যে মাটিতে সোনা ফলান, সে মাটিই যেন শুকিয়ে প্রাণহীণ। মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের টাকায় ফসল রোপণ করলেও খরায় চোখের সামনে নষ্ট হচ্ছে ফসল।

জালাল বলেন, 'মাটিতে রস নাই। বৃষ্টিও হচ্ছে না। সেজন্য বাদামের দানাও ছোট হয়ে যাচ্ছে। মেশিনের পানি দিলে ৫ দিনও থাকে না সে পানি। রোদে সব শুকিয়ে যায়।'

গত কয়েকবছর ধরেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে উত্তরাঞ্চলে। এবারও বৈশাখের শুরু থেকে চোখ রাঙাচ্ছে সূর্য। তাপমাত্রা উঠানামা করছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। এতে মাঠে ফসল ফলানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নাটোরের কৃষকরা। তীব্র তাপদাহে বাদাম, ভূট্টা, বিভিন্ন সবজির জমিতে ঘন ঘন সেচ দিতে গিয়ে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। পোড়া-মাকড়ও বেড়েছে আগের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। সব মিলিয়ে দিশেহারা ক্ষুদ্রচাষীরা।

একজন চাষী বলেন, 'বৃষ্টি যদি না হয়, যে ওষুধ দিচ্ছি, তা দিয়েও কোনো রেজাল্ট নেই। ৫০টা বেগুন হলে তারমধ্যে ৪৫টাই পোকা হচ্ছে। সেচ দিলেও পানি থাকছে না। দুইদিন পরপর সেচ দিতে হচ্ছে। যার জন্য খরচ বেশি হচ্ছে কিন্তু ফসল করতে পারছি না।'

কৃষি বিভাগ বলছে, গত কয়েক বছর ধরেই মার্চের মাঝামাঝি থেকেই বাড়তে শুরু করে তাপমাত্রার পারদ। আর গেল বছরের এপ্রিলে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। টানা তাপদাহে হুমকির মুখে পড়তে পারে উত্তরের কৃষি। দেখা দিতে পারে ফলন বিপর্যয়।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কল্যাণ প্রসাদ বলেন, 'প্রচণ্ড তাপের কারণে কৃষকের ফসল যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেজন্য আমাদের তাদেরকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিভিন্ন সেচ পাম্পের মালিকদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা যদি নিয়মিত জমিতে পানি সরবরাহ করে এবং সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে তাহলে আশা করা যায় আমাদের ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।'

টানা কয়েক দিনের তাপদাহে মলিন হয়ে যাচ্ছে ফসল। বিভিন্ন ফসলে দেখা দিয়েছে রোগ বালাই। কৃষকরা বলছেন, বছরের অন্যসময় এমনিতেই তাদের রোগবালাই দমন করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। তার উপর এই বিরূপ আবহাওয়ায় এখন ফসল উৎপাদন করাই তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দাঁড়িয়েছে।

এমএসআরএস