পৌষের গায়ে কুয়াশার চাদর। শীত বুড়ির নেমন্তন্নে তখনও ঘুম ভাঙ্গেনি বানেশ্বর গ্রামের। বছরের এ সময়টায় প্রকৃতিতে শীতের উপকরণ থাকে ঐশ্বর্যে ভরা। সে ঐশ্বর্য আরও বাড়ায় খেঁজুরের রসে। তাই ভোর থেকেই স্বাদের অন্বেষণে গাছ থেকে গাছে চলে গাছিদের ব্যস্ততা। সুউচ্চ খেঁজুর গাছ থেকে সংগৃহীত বিন্দু বিন্দু রসে, স্বাদের সিন্ধু বয়ে যায় গ্রাম থেকে নগরে।
একজন গাছি বলেন, ‘৭০ থেকে ৮০টি গাছ লাগাই। এতে আমার গুড় হয় ২০ থেকে ২৫ কেজি।’
সংগৃহীত রস আগুনের তাপে পরিবর্তন হয় গাঢ় গুড়ে। জ্বালানি, জ্বালের মাত্রা আর নানান রকম পরীক্ষায় স্বাদ নির্ধারণ করেন গুড়ের কারিগর। ক্রেতার চাহিদা অনুসারে গুড়কে পাটালি, খুরি বা আধুনিক ফয়েল পেপারের আকার দেয়া হয়। মান ভেদে হয় দামের পার্থক্য।
একজন গুড়ের কারিগর বলেন, ‘গত দুই হাট হলে গুড়ের চাহিদা বেড়েছে, দামও বেড়েছে। আবার শীত পড়তে রসটাও বেড়ে গেছে। অনলাইনেও গুড়ের দাম ৩০০ টাকা করে বিক্রে করছি আমরা। আর বাজারে বিক্রি করছি ২০০ থেকে ২২০ টাকা করে।’
সপ্তাহ জুড়ে জেলার চার উপজেলার শত-শত গ্রামে উৎপাদিত গুড় সংগ্রহ করে কৃষক। সপ্তাহের দুই দিন বানেশ্বর ও ঝলমলিয়া হাটে বিক্রি হয় গুড়। এক হাটে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকার গুড়ের বেচাকেনা হয় এখানে।
একজন বিক্রেতা বলেন, ‘বাজার যাচ্ছে ১৮০, ১৯০ বা সর্বোচ্চ ২০০ টাকা করে। গুড়ের মান এবার খুবই ভালো।’
শুধু হাটেই নয়, অনলাইনের সুবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকেই কিনছেন গুড়। মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যের বালাই না থাকায় গুনে মানে পাচ্ছেন সেরা পণ্য।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘অনলাইনে এই ব্যবসাগুলো যখন বাড়বে, বিটুবি বাড়বে বা অনলাইনে সরাসরি উৎপাদনকারীর থেকে ক্রেতা নিতে পারবে, এটা সম্ভব করা। তখন কিন্তু লাভবান সবচেয়ে বেশি হবে উৎপাদনকারীরা।’
তবে গাছি ও গুড়ের কারিগররা বলছেন, এ বছর অনলাইনে খেঁজুরের রসের বিক্রি বাড়ায় কমছে গুড়ের উৎপাদন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলার চার উপজেলায় খেজুর গাছের সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। চলতি মৌসুমে যা থেকে এ বছর প্রায় নয় হাজার মেট্রিকটন খেজুরের গুড় উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের।