গ্রামীণ কৃষি
কৃষি
0

নেত্রকোণায় ৬০০ কোটি টাকার সবজি উৎপাদনের লক্ষ্য

নেত্রকোণায় চলতি রবি মৌসুমে আনুমানিক ৬০০ কোটি টাকার সবজি উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সবজি চাষে চাষিদের কয়েকগুণ খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে এক মৌসুমে বীজ ও কীটনাশকের পেছনে খরচ হয় প্রায় ১১০ কোটি টাকা।

প্রায় বিশ শতক জমিতে টমেটোর চাষ করছেন জয়নাল মিয়া। গত বছর একই জমিতে চাষাবাদে ১২ হাজার টাকা খরচ হলেও এবার সার আর বীজ কিনতেই চলে গেছে ১০ হাজার। চাষের সব খরচ মিটিয়ে হিসাব দাঁড়াবে ২০ হাজারে যা গতবারের চেয়ে অনেক বেশি।

চাষি জয়নাল মিয়া বলেন, 'গতবছরের চাইতে ওষুধ কিনতে এইবার ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি টাকা লাগতাসে।'

অপর আরেক চাষি কামরুল ইসলাম প্রায় ৩ কাঠা জমিতে শসা ও লাউ চাষ করেছেন। বাজার দর ভালো না থাকায় কিছুটা কম দরে সবজি বিক্রি করতে হয়েছে। দিনশেষে সব খরচ মিটিয়ে তার কিছুটা লাভের আশা রয়েছে। বলেন, 'প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হইসে কিন্তু বাজার থাকলে ৪০ টাকা বিক্রি হইতো।'

 টমেটো ছাড়াও চলতি রবি মৌসুমে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিমসহ অন্তত ২০ প্রকার সবজি কৃষকরা আবাদ করেন। এ বছর কিছু সবজির বীজ সরবরাহ করেছে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন। যা জেলার মোট চাহিদার মাত্র এক শতাংশ। ফলে সবজি চাষে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বীজের চাহিদা মেটাচ্ছে।

চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রতি বছর আগে থেকেই পর্যাপ্ত বীজ ও কীটনাশকের মজুত থাকে‌। এর পুরোটাই বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, 'শীতকালে হাওরের জমি শুকিয়ে গেলে কৃষকরা সবজি চাষ করে।উচ্চ এবং নিম্নমানের বীজ আছে। হয়তো গতবছরের তুলনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ দাম এবার বেশি আছে।'

সবজি চাষে দাম বেড়েছে ওষুধের

বীজ ও কীটনাশক পুরোপুরি আমদানি নির্ভর হওয়ায় বাজারেও প্রতিনিয়ত দামের হেরফের হয়। গত বছরের তুলনায় প্রায় প্রতিটি বীজের প্যাকেটে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। কীটনাশকেরও একই অবস্থা।

চাষিরা বলেন, 'যার থাইকা যেমন রাখতে পারে। সার-বীজ সবকিছুর দাম বাড়তি। কমতো আর দেয় না কেউ। ৪০০ টাকা দিয়াও নিসি, ৫০০ টাকা দিয়াও নিসি।'

বাজারে বাড়তি দামে বীজ বিক্রির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ কমানো গেলে কৃষক ন্যায্য দাম পাবে বলে মনে করেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। বলেন, 'যদি কোন ধরনের দূর্যোগ না আসে তাহলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। কৃষক পর্যায় থেকে এখন পর্যন্ত বেশি দামের কোন অভিযোগ আসে নাই। অভিযোগ পেলে আমরা মাঠ পর্যায়ে সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।'

প্রতি মৌসুমে জেলায় সবজি চাষে অন্তত ৩০ মেট্রিক টন বীজের প্রয়োজন হয়। মান ভেদে এই বাজার দাঁড়ায় প্রায় ৪০ কোটি টাকায়। এছাড়াও আগাছা দমন, বালাইনাশক, ভিটামিন সহ কীটনাশকের পিছনে আরও ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা কৃষকদের খরচ করতে হয়।