১৯ ডিসেম্বর দেশের ফুটবল অঙ্গনে উদিত হয় নতুন ভোরের সূর্য। বিলেতে আলো ছড়ানো ঝাঁকড়া চুলের ছেলেটা যে দিয়েছে ঘোষণা, নাড়ির টানে ফিরছি বাড়ি, তেরো নদী দিয়ে পাড়ি। লাল-সবুজের ওই জার্সিটাই হবে জাতীয় দলের ঠিকানা।
হামজা চৌধুরীর বাড়ি ফেরার ঘোষণায় যখন মত্ত পুরো বাংলাদেশ, তখন এখন টেলিভিশনের গন্তব্য হবিগঞ্জের স্নানঘাট গ্রামে, যেখানে হামজার পৈতৃক নিবাস।
ধূধূ মাঠ আর পড়ন্ত সূর্যকে সঙ্গী করে দুই ঘণ্টার পথ পেরিয়ে যাওয়া হয় স্নানঘাটে। পথচারী কিশোর দলও এক নামেই চেনে হামজাকে।
অবশেষে দেখা মিলল বিখ্যাত সেই চৌধুরী বাড়ির। পুকুর ঘেঁষে সুবিশাল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা বাড়িটিতে ঢুকতেই পাওয়া গেল আলাদা অনুভূতি। অজপাড়া গাঁয়ে এটাই যে একমাত্র অট্টালিকা।
দুয়ার পেরুতেই কানে ভেসে আসে পবিত্র কোরআনের ধ্বনি। একখানা চালার ঘরে আরবি পড়ায় ব্যস্ত নানান বয়সের শিশু-কিশোর। তবে পরক্ষণেই মন ভেঙেছে, বাবা গোলাম মোর্শেদ চৌধুরীকে নিয়ে হামজা থাকেন পাঁচ হাজার মাইল দূরে, সেই লেস্টারশায়ারে। তাই একেবারে জনমানবশূন্য দেওয়ান বংশের এই অট্টালিকা।
সেখানেই দেখা মিললো রহিম চাচার। দীর্ঘকাল ধরে এই বাড়ির দেখভাল করছেন। হামজার বেড়ে ওঠাটাও দেখেছেন খুব কাছ থেকে।
রহিম চাচা বলেন, 'তার পেশা হলো খেলাধুলা। আর কোনো কাজ নেই। আর বাড়িতে আসলে আমাদের নিয়ে আর ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করে। কিছুদিন থেকে আবার চলে যায়।'
মানুষ বড় হলে নাকি শেকড় ভুলে যায়, তবে ব্যতিক্রম হামজা। বিশ্বের সেরা লিগে খেলা এই ফুটবলার নিজ পিতৃভূমিতে বড় ছেলে ঈসা হুসাইন চৌধুরীর নামে গড়েছেন এতিমখানা। যেখানে ২৫ থেকে ৩০টা শিশুর ভরণপোষণ বহন করেন তিনি।
রহিম চাচা বলেন, 'দাদার ইচ্ছে ছিল একটা এতিমখানা খুলবে। উনার দাদা দুনিয়াck নেই, পরে উনি বড় ছেলের নামে একটা এতিমখানা করেছে। এখানকার সব ভরণপোষণ উনি দেখে।'
খানিক দূরেই থাকেন হামজার আপন ফুপু রুবিনা দেওয়ান। তাই ছুটে যাওয়া তার বাসায়। সন্তান তুল্য ভাইপো তারকাখ্যাতি পেয়েও আছেন ঠিক আগের মতোই, জানালেন ফুপু রুবিনা।
রুবিনা দেওয়ান বলেন, 'সে আগে আমাদের কাছে যেমন হামজা ছিল, এখনও তেমনই হামজা আছে। বাচ্চাদের সাথে মেশা পছন্দ করতো, খেলাধুলা পছন্দ করতো। মানে আমরা আছি কি না কিছু দেখতো না কিন্তু গ্রামের বাচ্চাদের নিয়ে খেলাধুলা করতো।'
হামজার স্বপ্ন দেশে ফিরে পুরো পরিবার নিয়ে থাকবেন একই বাড়িতে, যেখানে বাবা-চাচাদের সাথে থাকতে হবে ফুপু রুবিনাকেও।
রুবিনা দেওয়ান বলেন, 'বলে ফুফু তোমার বাসা তো সবসময় চুরি হয়, আমি গেলে কিন্তু সব একসাথে থাকতে হবে। ওর মাকে বলতো, মা তুমি একটা মানুষ দেখবা ফুফুর বাসা দেখার জন্য, আর ফুফু সবাইকে নিয়ে আমাদের সাথে থাকবে।'