ঐতিহ্যবাহী আজাদ বয়েজ ক্লাব এখন পুলিশের আবাসস্থল!

খেলোয়াড়দের কণ্ঠে আক্ষেপ

ক্রিকেট
এখন মাঠে
0

একসময় ক্রীড়াপ্রেমীদের মুখে ফিরত ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আজাদ বয়েজের নাম। ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, আশরাফুল হকের মতো তারকারা খেলেছেন এই ক্লাবে। মোহামেডান, আবাহনীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চললেও সময়ের পরিক্রমায় অকার্যকর হয়ে গেছে ১৯৬০ এর দিকে গঠিত ক্লাবটি। খেলাধুলার বদলে এখন, আবাসস্থল হয়ে উঠেছে পুলিশের। যদিও কীসের ভিত্তিতে নিজেদের আবাসিক ভবন গড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জানতে চাইলে মেলেনি সদুত্তর। খেলোয়াড়দের কণ্ঠে ঝরেছে আক্ষেপ।

ক্লাব ছেড়েছেন প্রায় তিন যুগের কাছাকাছি। এখনো মনে প্রাণে ধারণ করেন নিজের প্রিয় ক্লাবকে। সময় পেলেই পরম যত্নে রাখা আজাদ বয়েজে নিজের পরিহিত সোয়েটার জার্সিটি হাত বুলিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ বাবু।

আজাদ বয়েজ ক্লাবের সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ বাবু বলেন, ‘আমাদের ক্লাবকে সবাই বলতো এটা ইংলিশ ক্লাব। আমরা যখন ফার্স্ট ডিভিশন খেলেছি তখন আমরা টপ থ্রিতে ছিলাম।’

দেশের ক্রিকেটের হাতেখড়ি যাদের মাধ্যমে, তাদের একজন সৈয়দ আশরাফুল হক। প্রথমবার আইসিসি ট্রফি জয়ের এই কারিগর ক্লাব ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন আজাদ বয়েজে।

আজাদ বয়েজ ক্লাবের সাবেক ক্রিকেটার সৈয়দ আশরাফুল হক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাতার নাম হলো মোস্তাক। তার নামে মিরপুরে একটা এনক্লোজার রয়েছে। ১৯৭১ পর ঢাকায় এসেছে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।’

দেশের ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র কাজী সালাউদ্দিনও আজাদ বয়েজের হয়ে ব্যাট হাতে ৬০ দশকের শেষের দিকে মাতিয়েছেন ক্রিকেট মাঠ।

দেশের অনেক কীর্তিমান ক্রিকেটারের পদধূলি পড়েছিল যে ক্লাবে কী অবস্থা এখন সেটির?

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাবের নামে বরাদ্দকৃত জায়গায় পুলিশের ব্যারাক। ফকিরেরপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবের পাশে ভবনটির প্রধান ফটকে ক্লাবের নাম ফলক থাকলেও এখন ক্লাবের কোনো চিহ্ন নেই। গেল সরকারের আমলে ক্লাবটির এক রুম দখলে নেয় যুবলীগ। বাকি রুমগুলোকে নিজেদের আবাসস্থল বানিয়ে নেয় মতিঝিল থানা পুলিশ।

বিগত কয়েক মাসে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু। রাজনৈতিক পালা বদলের পর যুবলীগ পালিয়ে গেলেও, ক্লাব দখলে রাখে মতিঝিল থানার পুলিশ সদস্যরা। সরকারের খাসজমিতে থাকার বিধান মেনে আছেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি থানার ওসি।

জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের আগস্টে আজাদ বয়েজকে ১২ শতক জায়গার জমিটি বুঝিয়ে দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তৎকালীন পরিচালক হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত কাগজটি হাতে আসে এখন টেলিভিশনের কাছে। তবে মতিঝিলের ভূমি অফিসে গিয়ে হতাশ হতে হয়। জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর থাকার বিষয়ে পাওয়া যায়নি কোন অনুমতিপত্র।

ভূমি অফিসের কর্মকর্তা জানান, পুলিশ ডিপার্টমেন্ট যাদের দখলে এখন আছে তাদের জেলা প্রশাসক থেকে একটা অনুমোদন নেয়া প্রয়োজন। সেটা তারা নিয়েছেন কিনা জানা নেই।

এ নিয়ে ডিএমপির মিডিয়া উইংয়ের উপকমিশনার তালেবুর রহমান জানালেন, লিখিত অনুমতি নেই, সমঝোতা করেই সেখানে আছে পুলিশ।

ডিএমপি মিডিয়া উইং মুখপাত্র তালেবুর রহমান বলেন, ‘ক্লাব কর্তৃপক্ষের যেহেতু ভাবে কোনো অ্যাক্টিভিটিস নাই, সেজন্য হয়তো তারা ক্লাবে আসেন না। আমাদের থানায় স্থান সংকুলান না হবার কারণে এবং এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এটা করা হচ্ছে।’

ঠিক কার সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে, তা জানাননি পুলিশের এই কর্তা। তবে, আজাদ বয়েজের সাবেক ক্রিকেটাররা জানিয়েছেন, ক্লাব কর্তৃপক্ষের অকার্যকারিতা ও তদারকির অভাবে অনেক দিন ধরেই যে যার মতো ব্যবহার করেছে ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি।

সাবেকরা চান, সঠিক যত্ন আর পরিচালনায় আবারও মাথা তুলে দাঁড়াক ক্লাবটি।

সৈয়দ আশরাফুল হক বলেন, ‘সবাই মিলে যদি আমরা জায়গা ফিরত নিতে পারি আর সরকার যদি দেয়, তাহলে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাবনা দিতে পারি।’

ইউসুফ বাবু বলেন, ‘আমি জানি না কীসের ভিত্তিতে তাদের কাছে জায়গা দেয়া হয়েছে। একবার আমরা বেশ কয়েকজন মিলে চেষ্টা করেছিলাম।’

এএম