ক্রিকেট
এখন মাঠে
0

ক্রিকেটের নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে আফগানিস্তান

ক্রিকেট বিশ্বের নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে আফগানিস্তান। বৈশ্বিক আসরগুলোতে যেমন দাপট দেখাচ্ছেন রশিদ-মুজিবরা, তেমনি দেশটির ঘরোয়া ক্রিকেটের অবকাঠামোতেও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। আইসিসির রাজস্বের পাশাপাশি সরকারও ব্যাপক বিনিয়োগ করছে খেলাটিতে।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে আফগানিস্তানে ক্রিকেটের চল। পাকিস্তানে খুরাসানের মত ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবির যেখানে নেই কোন পিচ, খেলাধুলার সামগ্রী, উইকেট, হেলমেট, গ্লাভস, সেখানে রয়েছে কেবলমাত্র ক্ষুধা। পাকিস্তানের সীমান্ত শহর পেশোয়ারে কাছাকাছি শরণার্থী শিবিরে কয়েক দশকে লাখ লাখ আফগান আশ্রয় নিয়েছেন। আর এসব আশ্রয়কেন্দ্রেই তারা আক্রান্ত হয়েছেন ক্রিকেটের ভালবাসায়।

আফগানিস্তানে এমনও ক্রিকেটার আছেন যাদের ক্রিকেট শিখতে পাকিস্তান একাডেমিতে যাওয়ার জন্য অর্থও ছিল না। ধার কর্জ করে শুধু পানি, বিস্কুট বা চিড়া খেয়ে অনুশীলন সেরেছেন। এমনকি বিস্কুট বিক্রি করা আয় দিয়ে সারা দিন চলত অনেকের।

আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯৫ সালে। তবে, তা বাধার মুখে পড়ে ১৯৯৬ সালে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর। অন্য খেলাধুলোর সঙ্গে ক্রিকেটেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তালিবানরা। পরে, ২০০০ সালে সে অবস্থান থেকে সরে আসে তারা। যুক্ত হয় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলে।

২০০৪ সালে খেলে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ট্রফিতে ষষ্ঠ স্থানে ছিল আফগানিস্তান। আইসিসি ট্রফি খেলার যোগ্যতা অর্জনের এই প্রতিযোগিতায় আফগানরা চমক দেখিয়েছিলেন মালয়েশিয়াকে হারিয়ে। এশিয়ার বিভিন্ন আঞ্চলিক টুর্নামেন্টে খেলে অভিজ্ঞতা বাড়াতে থাকে আফগানিস্তান। এর পরের গল্প ধারাবাহিক উত্থানের।

তালেবানরা ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর, আফগান ক্রিকেট বোর্ডের বেশিরভাগ কর্মকর্তাই দেশ ছেড়ে চলে যান। এছাড়া প্রায় দুই ডজন খেলোয়াড়ের জন্য নাগরিকত্ব ও ভিসার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

সম্প্রতি মহিলাদের বিরুদ্ধে তালেবানের কট্টর অবস্থানের কারণে আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ ঝুঁকিতে পড়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু এতসব প্রতিকূলতা সত্যেও আফগানিস্তান ক্রিকেট দল দমে যায়নি। বরং তালিবান শাসকরা বিনিয়োগ করছে ক্রিকেটে। ২০২২ সালে বোর্ডকে ১০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে আফগান সরকার।

এখনো তাদের বার্ষিক আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ ৪৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা থেকে আসে। এছাড়াও স্পন্সশিপ ও মিডিয়া মার্কেটিং থেকে আসে আয়ের ১১ শতাংশ যা প্রায় সাড়ে দশ লাখ ডলার।

স্বাভাবিকভাবেই ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তবে তারা তাদের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়েও যথেষ্ট সচেতন। তাইতো ঘরোয়া ক্রিকেট ও স্থাপনা তৈরিতেই তাদের ব্যয় প্রায় ২৫ শতাংশ। এখন পর্যন্ত তাদের ১১টি ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে, চলছে ১২ নম্বর মাঠের কাজ।

২০১০ সালে ওয়ার্ল্ড টি ২০ কোয়ালিফায়ার জিতে ওই বছরই প্রথম টি ২০ বিশ্বকাপ খেলে। ২০১০, ২০১২ ও ২০১৪ সালের টি ২০ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডে বিদায় নিলেও ২০১৬ সালে সুপার টেনে খেলেছিল আফগানিস্তান। তবে এবার গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ও সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে মসৃণ করেছেন সেমিফাইনালের রাস্তা।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর