অর্থনীতি , শিল্প-কারখানা
বিশেষ প্রতিবেদন
0

সিলেটে শিল্পদ্যোক্তা হতে চাইলেও নেই বিনিয়োগের পরিবেশ

প্রাকৃতিক সম্পদের ভরপুর সিলেটে বিনিয়োগ আর উদ্যোগের অভাব। এতে পিছিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। খাদিমনগর আর গোটাটিকর এলাকায় দু'টি বিসিক শিল্প এলাকা থাকলেও সামগ্রিক শিল্পখাতের তেমন অগ্রগতি নেই। যদিও বিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, শিগগিরই সকল সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি নতুন আরেকটি শিল্প এলাকা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

নানা সমস্যায় সিলেটে তৈরি হচ্ছে না নতুন উদ্যোক্তা। তবে দেশে বা প্রবাস থেকেও যারা শিল্পোদ্যোক্তা হতে চান তাদেরও নেই বিনিয়োগ করার পরিবেশ।

সিলেট শহর থেকে সামান্য দুরে অবস্থান গোটাটিকর শিল্প এলাকা। ১৯৬৪ সালের প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রায় ২৫ একর জায়গা নিয়ে যাত্রা শুরু। ৭২টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে ৬৬টিতে চলছে উৎপাদন। একইভাবে খাদিম এলাকায় ১৯৯৫ সালে ২৭.৭৫ একর জায়গা নিয়ে শুরু হওয়া শিল্প নগরীর ৭৪টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে উৎপাদনে ৬৫টি ইউনিটে। যদিও এর মধ্যে গ্যাস বিদ্যুৎ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংকটের অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের।

গোটাটিকর বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন বলেন, 'এখানে গ্যাসের সমস্যা আছে। গ্যাসনির্ভর অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে, এগুলো গ্যাস পাচ্ছে না। একটা স্পেশাল প্রজেক্ট নিয়ে হলেও যেন গ্যাসটা দেয়া হয় আমরা সেই দাবি করছি।'

সিলেট বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম বাবুল বলেন, 'আমাদের ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে অনেক জায়গায় লাইট নেই, অন্ধকারের মধ্যে অনেক সময় দেখা যায় বাইরে থেকে মাদকাসক্তরা এসে মাদক সেবন করে।'

শিল্পনগরীতে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ারও অভিযোগ ব্যবসায়ী নেতাদের। তারা বলছেন, কয়েকটি খাত বিবেচনায় সংস্কার করতে পারলেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার হতে পারে সিলেটের বিসিক এলাকা। তাছাড়া প্রবাসী বিনিয়োগও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

সিলেট বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলিমুল এহসান চৌধুরী বলেন, 'ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন বা বিসিক শিল্প এলাকা হোক এটা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি সিলেটের অনেক প্রবাসী আছে যারা দেশে ইনভেস্ট করতে চান তাবারও কিন্তু এসে বিমুখ হয়ে যায়। কোনো রেডি প্লট তারা পন না।'

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ফয়েজ হাসান ফেরদৌস বলেন, 'তিনটি পয়েন্ট নিয়ে যদি সরকার আমাদের জন্য কাজ করে। নতুন একটা শিল্পনগরী দেবে আমাদের পুরাতন দু'টি শিল্পনগরীতে জায়গা হচ্ছে না। অনেকেই প্লট বরাদ্দ নিয়েছে কিন্তু চালু করতে পারে নি। তারে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে তৈরি করা।'

বিসিক কর্মকর্তা বলছেন, শিল্পাঞ্চল এলাকায় উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখে নতুন আরেকটি শিল্প এলাকা নির্মাণের সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত পর্যায়ে।

সিলেট বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী ম.সুহেল হাওলাদার বলেন, 'সিকিউরিটি নিয়েও আমরা কাজ শুরু করেছি অলরেডি। ডিসি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে একটা চাহিদাপত্র চাওয়া হয়েছিল, সে বেসিসে আমাদের কমিটির কাজ চলমান আছে। আশা করি এক মাসের মধ্যেই ডিসি অফিসের রিকুয়ারমেন্ট অনুযায়ী সম্মতিপত্র নিয়ে ঢাকাতে পাঠাতে পারবো। সেক্ষেত্রে ১০ একর জায়গায় আমরা বিসিক শিল্পনগরী করছি।'

যেকোনো অঞ্চলের অর্থনীতির গতিশীলতা নির্ভর করে তার শিল্প এলাকার ওপর। সিলেটে ২ টি শিল্পনগরী থাকলে ব্যবসাবান্ধব আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা না থাকায় কোন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছেনা । ব্যবসায়ীরা বলছেন গ্যাস বিদ্যুতের সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারলে একদিকে যেমন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে অন্যদিকে আকৃষ্ট হবে প্রবাসী বিনিয়োগও।

এসএস