অর্থনীতি , আমদানি-রপ্তানি
বিশেষ প্রতিবেদন
0

কার্যকর হচ্ছে না লাইটারেজ জাহাজে পণ্য পরিবহনের নতুন নীতিমালা

কার্যকর করা যাচ্ছে না চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য পরিবহনের নতুন নীতিমালা। উল্টো নীতিমালাকে কেন্দ্র করে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে জাহাজ মালিকসহ বন্দর ব্যবহারকারী নানা পক্ষ। জাহাজ মালিক ও আমদানিকারকদের অভিযোগ, জাহাজ বরাদ্দের নতুন সেল পরিচালনার পদ্ধতি ও ভাড়ার হার নির্ধারণ না করে, সবপক্ষের সাথে আলোচনা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে নীতিমালা করা হয়েছে। এই নীতিমালায় ভাড়া ও জাহাজ বরাদ্দে আগের মতোই সিন্ডিকেট হবে বলে শঙ্কা তাদের।

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে শিল্পের কাঁচামাল,সার, ভোগ্য পণ্য , কয়লা ,পাথর, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বছরে অন্তত দশ কোটি টন পণ্য খালাস হয়। প্রায় ১৮শ’ বেসরকারি লাইটারেজ জাহাজ এই পণ্য খালাস করে অভ্যন্তরীণ নৌপথে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেয়।

২০০৩ সাল থেকে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের সিরিয়াল অনুসারে এসব জাহাজ চললেও অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্ট এক রায়ে এই প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং ২০২৩ এর ডিসেম্বরে বিলুপ্ত হয় সংগঠনটি।

এ অব্স্থায় মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস এবং অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে পণ্য পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর গত ১৫ অক্টোবর একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে।

প্রজ্ঞাপনের গ্রাফিক্স যদিও চট্টগ্রামের জাহাজ মালিক ও পণ্যের এজেন্টদের অভিযোগ, নীতিমালাটি অসম্পূর্ণ ও সব পক্ষের সাথেই আলোচনা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে করা হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে দূরত্বভেদে ভাড়া , ডেমারেজ চার্জ ,অগ্রিম কত টাকা পরিশোধ হবে কোন কিছুই উল্লেখ নেই।

সব পক্ষের সাথে সমন্বয় না করে পণ্য পরিবহনের উচ্চ ভাড়া চাপিয়ে দিয়ে সিরিয়াল প্রথা চালু সম্ভব নয় বলে দাবি তাদের।

ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাংয়ের মুখপাত্র পারেভেজ আহমেদ বলেন, ‘নীতিমালাতে অনেগুলো জিনিস বাদ রয়েছে। এখানে কর্ম পরিচালনা পদ্ধতি ঠিক করা নেই। এখানে ডেমারেজ চার্জ কত হবে? জাহাজ কতদিনে খালি করতে হবে এই সমস্ত জিনিসগুলো আসা দরকার বলে আমি মনে করি।’

গত বৃহস্পতিবার নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠন, কার্গো এজেন্ট, বন্দর, কাস্টমসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সাথে বৈঠক ডব্লিউটিসিসির কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিলেও ভেস্তে যায়।

এ অবস্থায় জাহাজ মালিকদের দুটি সংগঠন নিজেদের জাহাজ সিরিয়ালে দিলেও যুক্ত হয়নি চট্টগ্রামের জাহাজ মালিক ও পণ্যের এজেন্টরা।

সিরিয়াল ছাড়া লাইটারেজ জাহাজ দিয়ে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাসে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বলেও অভিযোগ এজেন্টদের।

কার্গো এজেন্টের শেখ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জাহাজ মালিকরা শুধু চট্টগ্রাম বন্দরে সিরিয়াল করছে। যার ফলে মাদার ভেসেলে পণ্য খালাসে সমস্যা হচ্ছে। যার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে যেকোনো মুহূর্তে কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

শিপিং এজেন্ট ও শিল্প মালিকরা বলছেন, বহির্নোঙরে পণ্য খালাসে শৃঙ্খলা না থাকলে আমদানিকারক ও শিল্প মালিকরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, বাড়ে পণ্যের দাম। ক্ষতি হয় বন্দরের ইমেজ।

অতীতে ওয়াটার ট্রান্সপোর্টে সেলের সিন্ডিকেটের কারণে শিল্প মালিক ও আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুর্নীতি করে ডব্লিউটিসির নেতারা বিপুল অঙ্কের অর্থ লোপাট করছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

নতুন প্লাটফর্ম ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন সেল পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ভাড়া যৌক্তিক করার দাবি তাদের।

সিকমের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল বাশেদ বলেন, ‘ভেসেল ওনাররা কখনো তাদের মতামত দিতে পারে নাই সেই সঙ্গে কোনো বেনিফিটও নিতে পারে নাই। নিয়েছে যারা সমন্বয়ক ছিল তারাই নিয়েছে।’

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, ‘এটার মাধ্যমে ডিপেন্ড করছে বন্দরের ইমেজ, প্রোডাক্টের দাম। সবাইকে নিয়ে রেটটা যেন সহনীয় হয় এবং সহজেই যেন আমাদের আমদানিকারকরা লাইটার জাহাজ পায়।’

নীতিমালায় অনেক বিষয় অস্পষ্ট স্বীকার করে সমস্যা সমাধানে নৌ বাণিজ্য দপ্তর বলছে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা প্রয়োজন।

নৌবাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমদু বলেন, ‘কার্গো ওনার ও শিপ ওনার উভয় পক্ষ যতখন পর্যন্ত এক জায়গায় আসতে পারবে না ততখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।’

গেল ডিসেম্বরে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলে বিলুপ্তির পরে আমদানিকারকরা ব্যক্তিগতভাবে জাহাজ মালিকদের স্থানীয় এজেন্টদের কাছ থেকে লাইটারেজ জাহাজ ভাড়া নিতেন। তখন জাহাজ ভাড়া প্রতি টনে ৫৭৪ টাকা থেকে কমে ৪২০ টাকায় নেমে আসে।

ইএ