নিজের গচ্ছিত অর্থ ব্যাংকে রেখেছিলেন, এখন সেই অর্থ তোলা প্রয়োজন হলেও পারছেন না আমানতকারী। এমনই বেকায়দায় পড়েছেন মনির হোসেন। ব্যাংকে টাকা জমা রেখে তুলতে না পারার মতো এমন ভোগান্তি শুধু মনিরের একার না। এ চিত্র দীর্ঘদিনের আর্থিক অনিয়ম, অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও খেলাপি ঋণে নাজুক হওয়া পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের ৯২ লাখ গ্রাহকের। এসব ব্যাংক নিয়ে সম্প্রতি গঠন করা হয়েছে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক।
খেলাপি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণ করা হয় ১৮ লাখ কোটি টাকার বেশি। যার মধ্যে খেলাপির খাতায় উঠেছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ। এরমধ্যে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন ও এক্সিম ব্যাংকের ঋণের ৭৬ শতাংশই খেলাপি, যার পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে এসব ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমানতকারীরা যখন চরম হতাশায়, তখন গ্রাহকদের উদ্বেগ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, শিগগিরই স্বাভাবিক হবে অর্থ উত্তোলন প্রক্রিয়া। তবে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগতে পারে ২ বছরের মতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসাইন খান বলেন, ‘যখন পরিশোধিত মূলধনের ২০ হাজার টাকা চলে আসবে তখন কিন্তু গ্রাহকরা টাকা পাবে। খুব বেশি সময় লাগবে না। কারণ বাধাই ছিলো ব্যাংক সৃষ্টি হয় না। যেহেতু ব্যাংকের লাইসেন্স আমরা হস্তান্তর করে ফেলেছি কাজেই এটা এখন সময়সাপেক্ষ। কিছু টেকনিক্যাল ইস্যু আছে। বড় কোনো আইনগত ইস্যু নেই।’
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই প্রধান অর্থনীতিবিদ বলছেন, গ্রাহকদের অর্থ ফেরানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে কতটুকু সংকট কাটবে তা নিয়ে সন্দিহান তিনি।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘টাকা রাখার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আপনি প্রয়োজনমতো আপনার টাকাটা আপনার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এজন্যই মানুষ সঞ্চয় করে, আমানত রাখে। অনেকে দুই হাজার টাকাও তুলতে পারছেন না। আমানতকারীদের যে দুর্ভোগ এটা তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা তো ব্যাংক খাতকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।’
তবে, সরকারি বিনিয়োগে সংকট কাটার সম্ভাবনা দেখছেন না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক। বরং, খেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ তার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসাইন সিদ্দিক বলেন, ‘ব্যাংক চলে বিশ্বাসের ওপর। আপনি স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে না পারা মানে হচ্ছে আপনি জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হবেন না। যে কারণে সরকার যে টাকাটা ব্যয় করবে ব্যাংকগুলোকে দাঁড় করানোর জন্য প্রকৃতপক্ষে সে টাকাটাই ভবিষ্যতে ওঠে আসার জন্য আমি মনে করি একটা সংখ্যা হিসেবে থাকছে।’
তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমানতের অর্থের ওপর মুনাফা পাবেন গ্রাহকরা।





