রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের লক্ষ্যে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যেখানে দীর্ঘ আট মাসের যাত্রায় দুই পর্বের আলোচনায় উঠে আসে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব। এর মধ্যে ১৪টি প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি আনে দলগুলো।
গণভোটের সময়, ধরণসহ তিনটি বিষয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্য ছাড়াই শেষ হয় কমিশনের আলোচনা। এমন প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র সংস্কার সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে বহুল আলোচিত জুলাই সনদ স্বাক্ষরের তারিখ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। ১৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক এ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্বাক্ষরের দিনক্ষণ ঠিক হলেও প্রশ্ন রয়েছে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে। কেননা দীর্ঘ আলোচনার পর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে একমত হলেও ভোটের ভিত্তি, সময় ও পদ্ধতি নিয়ে এক বিন্দুতে পৌঁছাতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। কোনো দলের চাওয়া, ব্যয় সংকোচন করে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গেই গণভোট আয়োজন আবার কারেও দাবি গণভোট হোক তফসিলের আগেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গণভোটই ঐকমত্যে পৌঁছানোর একমাত্র মঞ্চ। তবে গণভোট জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে সমন্বয় করা হলে তা জনগণের মাঝে ধোঁয়াশা তৈরি করবে।
আরও পড়ুন:
রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘গণভোট একই দিনে কেন হতে হবে? এক দিনে হওয়ার কারণটা কী? মানে খরচ বাঁচানোর জন্য। বাংলাদেশের কত টাকা কত দিকে খরচ হচ্ছে তার কোনো হিসাব নাই। গণভোট হলো ডিরেক্ট ডেমোক্রেসি, মানে সরাসরি জনগণ বলছে আমি এটা চাই আর এটা চাই না। এটার ওপরে আর কোনো কথা হতে পারে না। যখন গণভোটে একটা জিনিস পাস হয়ে যায়, সেটাকে সংযোজন, বিয়োজন করার অধিকার সংসদের নাই।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণভোটে নোট অব ডিসেন্ট বা ভিন্নমতের প্রস্তাবগুলো সমন্বয় করে হবে নাকি সমন্বয় ছাড়াই হবে সে বিষয়ে সংশয় রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে একমত না হলে পরবর্তী সংসদকে সংবিধান সংস্কারের ক্ষমতা দেয়া যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে গণভোট গৌণ হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে সংস্কার প্রস্তাব হিসেবেই জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। জনগণের কাছে বলতে হবে যে আপনি পিআর পদ্ধতি উচ্চকক্ষ চান কি না? বলা যাবে না যে এখানে আরও পাঁচটি দলের নোট অব ডিসেন্ট আছে বা একটি দলেরও নোট অব ডিসেন্ট আছে। কিন্তু অবশ্যই আপনি জনগণকে জানাবেন যে, এ সংস্কার প্রস্তাব আপনি জনগণের কাছে নিয়েছেন কিন্তু এ ব্যাপারে কিছু রাজনৈতিক দলের বা নাম দিয়েই যে এ দলের সব বিষয়ে ভিন্নমত আছে। তাহলেই গণভোটটা ট্রান্সপারেন্ট হবে। এবং গণভোটটা একটা অর্থপূর্ণ গণভোট হবে।’
আরও পড়ুন:
তবে জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের সপক্ষে যুক্তি দেন রাজনীতিবিদরা।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেন, ‘এ হা-না ভোট হবে, কোনো অপশক্তি এটাকে বানচাল করার চেষ্টা করবে না বা যারা চান না যে, সংস্কার হোক— সেসমস্ত দুষ্কৃতিকারীরা যারা দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন পতিত স্বৈরাচারের, তাদের লোকজনরা এসে এ সংস্কারের বিরুদ্ধে এসে না তে ভোট দিয়ে যাবেন। আমি মনে করি এটা এক ধরনের ব্লান্ডার হতে পারে। একই দিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় হা-না ভোট যদি অনুষ্ঠিত হয় তাহলে সরকারের শতশত কোটি টাকা বেঁচে যাবে।’
সব জল্পনাকে পাশ কাটিয়ে দেশের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে জুলাই সনদ অন্যতম পাথেয় হবে বলে মত বিশ্লেষকদের। আর তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে নমনীয় হয়ে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ তাদের।




