ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন বাস্তবায়নে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও, কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে এ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। কারণ উচ্চকক্ষে পিআর নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত দিলেও এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে অভ্যুত্থানের পর থেকেই নিম্নকক্ষে পিআর এর দাবি জানিয়ে আসছে জামায়াত ইসলামী। এবার পিআর এর দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নেমেছে ইসলামী সাতটি রাজনৈতিক দল।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘রহস্যজনকভাবে একটি প্রভাবশালী শক্তি সরকারের ওপরে জোর খাটিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছে না।’
এদিকে অহেতুক চাপ সৃষ্টি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয় বলে জানিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল, এটা নিয়ে তো কোনো সন্দেহ নেই। আমরা কিন্তু পরিবর্তনের পর এখন পর্যন্ত কোনো ইস্যুতেই রাজপথে আসিনি। আমরা আলোচনার মাধ্যমেই সমস্ত কিছু সমাধান করতে চাচ্ছি।’
দলগুলোর রাজপথের কর্মসূচি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। কেউ বলছেন, রাজপথের আন্দোলন সমাধান নয়, অন্যদিকে টেবিলের আলোচনায় সমাধান হয়নি বলেই রাজপথ বেছে নিতে হয়েছে বলে মত দেন কেউ কেউ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনিন বলেন, ‘ রাস্তায় নামাটা মানুষ পছন্দ করছে না। কোনো একটা দল রাস্তায় দাঁড়ায় তখনই একটা জ্যাম হয়ে যায়। এটাতে মানুষ ভীষণ বিরক্ত। এগুলো আমার মনে হয় মানুষের ভোটিংকে রিফ্লেক্ট করবে। তো রাস্তাটা বন্ধ করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে ডায়ালগ করা।’
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাকী বলেন, ‘রাজপথে নামতে হয় তো সেজন্য, আপনি তো ঐকমত্যে আসতে পারলেন না টেবিলে। পিআর পদ্ধতির একটা দাবি আছে তাদের। কেন নামছে? সে সিট পাবে না বলে। তার স্বার্থ সে দেখছে। আর যে পিআর চায় না, সে দেখে পিআর হলে তার সিট কমে যায়, একচ্ছত্র আধিপত্য কমে যায়। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হলে, রাষ্ট্রকে ভালোবাসতে হলে, জনগণকে ভালোবাসতে হলে, রাষ্ট্রের উপকারের জন্য শক্ত বিরোধী দল দরকার।’
এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপির অবস্থান সংসদ ছাড়া সংবিধান সংশোধন সম্ভব নয়। তখন প্রশ্ন উঠছে, বিদ্যমান নির্বাচনী পদ্ধতিতে অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া অনেক রাজনৈতিক দল, পরবর্তী সংসদে আসন পাবে কি না?
আরও পড়ুন:
আবু হেনা রাজ্জাকী বলেন, ‘অন্য যারা আছে তারা যদি সংসদে না যায় তাহলে তাদের কথার সুযোগ নেই। সেজন্য যদি আপনি ভাবেন, আপনাকে অন্য চিন্তা করতে হবে যে কীভাবে আনতে হয়। কিন্তু ঠিক এ মুহূর্তে বাংলাদেশে ইফেক্টিভ হলে পিআর পদ্ধতি। পিআর পদ্ধতি হলে কী হবে? একটা সরকার হবে, দুর্বল সরকার। সবাই বলে, আমিও বলি, দুর্বল সরকার হবে। কিন্তু যদি দেশ ঠিক করতে চান, তাহলে সংসদে যাওয়ার পর তার ওপর থেকে আস্থা তুলে নিয়ে আসবে যদি উনি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করেন।’
ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনিন বলেন বলেন, ‘আমাদের প্রচলিত হয়ে গেছে একটা সিস্টেম, আমার কাছে মনে হয় সে সিস্টেমে থাকাটাই ভালো। যদি সবগুলো দল একসঙ্গে বসে একটা জাতীয় সরকার গঠন করে তাহলে সেটা হতে পারে।’
অভ্যুত্থানের পর সচেতন জনগণ এখন অন্ধভাবে কাউকে সমর্থন করে না। সেজন্য জনগণের জন্য যারা কাজ করবে তারাই আগামী নির্বাচনে জনসমর্থন পাবে বলে মত বিশ্লেষকদের।
ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনিন বলেন বলেন, ‘শুধু যদি ভেবে নেয় যে, আমরা জিতেই যাবো, ওইটা হচ্ছে ভুল। ডাকসু বা জাকসু নির্বাচন ওই জিনিসটাই মানুষকে জানিয়েছে যে, কাজ করে আমাদের সমর্থন নিতে হবে। জাতীয় নির্বাচনেও এটাই হবে। ওই দলের এত সাপোর্টার, ওই দলের এত সাপোর্টার, খন তারা এভাবে ভোট দেবে না। এই যে সচেতনতা, টা বাংলাদেশ নতুন। এটা আন্দোলনের পর বাংলাদেশে হয়েছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ঐক্য ধরে রেখে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। সব পক্ষ দায়িত্বশীল আচরণ না করলে বিভাজনের সুযোগ নিবে পরাজিত শক্তি।




