অ্যাপ ছেড়ে চুক্তিতে রাইড শেয়ারিং: জেনে-বুঝেই ঝুঁকি নিচ্ছেন যাত্রী!

চুক্তিতে রাইড শেয়ারিং
চুক্তিতে রাইড শেয়ারিং | ছবি: এখন টিভি
0

রাজধানীর গণপরিবহনের সমস্যা কমাতে শুরু হওয়া রাইড শেয়ারিং যেন এখন এক ভোগান্তির নাম। নানা কারণে দিন দিন অ্যাপ থেকে মুখ ফেরিয়ে চুক্তিতে চলাচল করছেন বাইক চালকরা। বাধ্য হয়েই দরদাম করতে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে উভয়েরই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাইড শেয়ারিং নীতিমালা বাস্তবায়নের অভাবে সড়কে দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা।

রাজধানীর যে কোনো ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে দাঁড়ালেই দেখা যায় যাত্রীর অপেক্ষায় বসে আছেন বাইক চালক। যার প্রয়োজন, দরদাম করে বাইকচালকের পেছনে সওয়ার হন তিনি। তবে যার দরদামে পোষায় না, আরেক বাইকের দিকে এগিয়ে যান তিনি। কিন্তু এমন হওয়ার কথা ছিল না। অ্যাপে রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য ডাকলে মোটরসাইকেল হাজির হবে নির্দিষ্ট জায়গায়, সেটাই নিয়ম। কিন্তু সেই নিয়ম এখন আর নেই। অ্যাপের মোটরসাইকেল পরিণত হয়েছে চুক্তির বাহনে।

যানজটসহ চলাচলে নানা প্রতিবন্ধকতার শহর ঢাকায় কিছুটা স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছিল রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো। প্রায় বছর দশেক আগে কর্মব্যস্ত শহরে নগরবাসীর যাতায়াত ব্যবস্থাকে নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাজারে আসে পাঠাও। এরপর একে একে আসে উবার, ওভাইসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান।

আশা জাগিয়েও অল্প সময়ের মধ্যেই রাইড শেয়ারিং পরিণত হয়েছে ভোগান্তিতে। অতিরিক্ত ভাড়া, ডিজিটাল পেমেন্টে রাজি না হওয়া ও যাত্রী হয়রানি ইস্যুতে চালক, যাত্রী ও প্রতিষ্ঠান দুষছেন একে অপরকে।

রাইডারদের একজন বলেন, ‘একজন যাত্রী যদি অ্যাপ ব্যবহার করে রাইডারকে কল দেই সেক্ষেত্রে যাত্রীর নিরাপত্তা আছে। যদি রাইডার ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে কোম্পানি কোনো নিরাপত্তা দিয়ে থাকে না।’

আরেকজন বলেন, ‘অ্যাপে অনেক সময় লস হয়ে যায়। দেখা যায় যাত্রী এমন জায়গা থেকে কল করেছে সেখানে গেলে আর ভাড়া হয় না।’

যাত্রীদের একজন বলেন, ‘অ্যাপে অনেক সময় নেটের কারণে রাইডার পাওয়া যায় না। আবার অ্যাপে কল করলে অনেক সময় রাইডার যেতে চাই না।’

পরস্পর দোষারোপের চক্রে পরে যুব কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাময় খাত রাইড শেয়ারিং যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, যানজটের এ নগরীতে প্রায় পাঁচ লাখ এবং সারাদেশে প্রায় ১২ লাখ মোটরযান রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত। যার অধিকাংশই অ্যাপের বিপরীতে চলে চুক্তিতে।

যাত্রীরা বলছেন, বাইক চালকরা অ্যাপ ব্যবহার না করায় একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান, তেমনি গ্রাহকসেবা নিয়েও জবাবদিহিতার বাইরে থাকছেন তারা। ভাড়া নিয়ে দরদামের সময় কটূক্তি, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো এবং ত্রুটিযুক্ত বাইক রাইডে ব্যবহারের প্রবণতার পাশাপাশি বাড়ছে অপরাধও।

যাত্রীদের একজন বলেন, ‘চুক্তিতে গেলে ভাড়া নিয়ে অনেক সময় রেষারেষি হয়ে থাকে। অ্যাপে একটা ফিক্সড ভাড়া থাকে।’

আরেকজন বলেন, ‘অ্যাপে গেলে একটা রিস্ক মুক্ত থাকে। রাইডারদের সব ডেটা রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতে থাকে।’

অ্যাপভিত্তিক যানবাহন শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে ২০১৭ সালে আইন হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খাতে এখনো ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, ‘যারা এই রাইড শেয়ারের অনুমোদন দিয়েছেন তারা অনুমোদন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিভাবক হিসেবে তার চুক্তিবদ্ধ অবস্থায় যে শর্তগুলো আছে, সেবার মানদণ্ডগুলো তাকে বলা হয়েছে, সেটা দেখার জন্য যে অথরিটি থাকার কথা তা নেই।’

নানা সমস্যায় জর্জরিত এই খাত সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় করোনা মহামারির সময়। যার প্রভাব কাটেনি এখনও। বর্তমানে ওভাই, পিকমি ও সহজসহ ১৫টি নিবন্ধিত রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশে। এরমধ্যে অনেকে লাইসেন্স নিয়েও অবস্থা বিবেচনায় কার্যক্রম শুরু করেননি আর বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে লোকসানে। ফলে টিকে আছে মাত্র ২-৩টি প্রতিষ্ঠান।

সেজু