কান ফাটা গুলির শব্দ। ৩৬ জুলাইয়ের রক্ত ঝরা দিন। কোটা সংস্কারের সমর্থনে রাজপথে নামা ছাত্র-জনতার বুকে সেদিন অস্ত্র হাতে রাষ্ট্রযন্ত্রের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল পুলিশ। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল ছাত্র-জনতা।
ছাত্র-জনতার বাঁধা ভাঙা জোয়ারে সেদিন পালিয়ে বেঁচেছিল পুলিশ।
পালানোদের মধ্যে কতজন এখনও কর্মস্থলে ফেরেনি তার খোঁজ নিতে চায় এখন টিভি। প্রথমেই শুরুটা মিরপুর থানা থেকে। এই থানায় ৫ আগষ্টের আগে কতজন কর্মরত ছিলেন আর কতজনই বা পরে যোগ দিয়েছেন?
যেতে হবে মিরপুর বিভাগের ডিসি অফিসে। এই বিভাগের অধীনে সাতটি থানার তথ্য থাকার কথা এখানে। পাওয়া যায় না কিছুই।
এবার গন্তব্য মোহাম্মদপুর থানায়। ৫ আগস্টের পর এই থানাটি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। পালিয়ে ছিল এখানকার সব কর্মকর্তা? কারা ৫ আগস্টের আগে কর্মরত ছিল এই থানায়? নতুন কর্মস্থলে যোগ দেয়াদের তথ্য সেরেস্তার রুমে পাওয়া গেলেও আগের হিসেব নেই কারও কাছে।
এবার গন্তব্য ভাটারা থানায়। এই থানাটিও বিক্ষুব্ধ জনতা পুড়িয়ে দিয়েছিল। এই থানার সাবেক ওসি মাইনুল ইসলাম ৫ আগস্ট থেকেই রয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালে। ৫ আগস্টের পরে তিনি ভাটারা থানায় যোগ দিয়েছিলেন কি না তাও জানা নেই পুলিশের।
মাঠের পুলিশের কাছে তথ্য নেই। তাই যেতে হবে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে। ঠিক সাত মাস আগের তথ্যের উপরই দাঁড়িয়ে আছে তারা। সে হিসেবে পালিয়ে যাওয়া পুলিশের সংখ্যা ১৮৭ জন। যাদের মধ্যে ডিআইজি একজন, অতিরিক্ত ডিআইজি সাত জন, পুলিশ সুপার দুইজন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একজন, সহকারী পুলিশ সুপার পাঁচজন, পুলিশ পরিদর্শক পাঁচজন, এসআই ও সার্জেন্ট ১৪ জন, এএসআই নয়জন, নায়েক সাত জন এবং কনস্টেবল ১৩৬ জন।
পালানোর তালিকায় স্থান পাওয়া পুলিশের মধ্যে নায়েক ও কনস্টেবল ১৪৩ জন। এতজন নায়েক ও কনস্টেবল পালানোর কারণ কী?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'কনস্টেবল, এসআইদের তো হুদিস নাই। এখন এইগুলো কী দেখাবো? এগুলো পলাতক দেখাচ্ছি।'
এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যা মামলা হওয়ার পর প্রায় ২০ পুলিশ কর্মকর্তা কর্মস্থল থেকে পালিয়েছে। কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে?
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, 'যারা আমাদের কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে, মরা তাদের অবস্থান শনাক্তকরণের চেষ্টা করছি। এবং আমাদের যে নজরদারি সেটি কিন্তু রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যে আইন রয়েছে, বিভাগীয় যে ব্যবস্থা রয়েছে, সরকারি চাকরি আইন যেটি রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান রয়েছে।'
পুলিশের এসব সদস্যদের অবস্থান শনাক্ত জরুরি। দ্রুতসময়ের মধ্যে অবস্থান শনাক্ত না করতে পারলে বড় অপরাধের সাথে জড়িয়ে যেতে পারে এমন শঙ্কা সমাজ বিশ্লেষকদের।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, 'পুলিশ এবং ইনটেলিজেন্স যে ইউনিটগুলো আছে এদের খুঁজে বের করা। সে দেশের মধ্যে থাকলে সেটাকে খুঁজে বের করা বা দেশের বাইরে গেলেও সেটাকে নানা ধরনের উপায়গুলো বা প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা। কারণ একটা ভয় কিন্তু থেকেই যায়।'
দেশের বিভিন্ন থানায় জুলাই আগস্ট সহিংসতায় এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ মামলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সৈনিকদের বিরুদ্ধে হয়েছে।