রাজধানীর গণপরিহনে শৃংখলা ফেরাতে বহু দশক ধরে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে কোনটাই কার্যকরী হয়নি।
সর্বশেষ রাজধানীর গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে একক বাস কোম্পানি চালু করে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ ডিটিসিএ।
বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার বাস রুটের সংখ্যা কমিয়ে ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় সব বাস চলানোর পরিকল্পনা করা হয়।
তবে এবারও প্রথম ধাপে ব্যর্থ হয় ডিটিসিএ। পরবর্তীতে সকল পরিকল্পনা বাদ দিয়ে সংস্থাটির পরিকল্পিত শুধুমাত্র ২১ নম্বর রুট, গাবতলী থেকে চাষাড়া ৩৫টি এসি বাস দিয়ে ঢাকা নগর পরিবহন সেবা চালু করা হয়। তবে এই রুটে অন্য বাস কোম্পানিগুলোকে ঢাকা নগর পরিবহন এর আওতায় এখনো নিয়ে আসতে পারেনি।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বিদ্যমান ব্যবস্থায় ঢাকা নগর পরিবহনকে অন্যান্য কোম্পানির নন এসি বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই চলতে হচ্ছে। সেসব বাস সরানোর নেই কোনও উদ্যোগও। গাবতলী থেকে চাষারা রুটে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে না হলেও অন্য রুটগুলোতে ঢাকা নগর পরিবহনের বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। তাদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ভাড়া নিলেও পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা।
যাত্রীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘যানজটের কারণে গাড়িগুলো দেরি করে আসছে।’
আরেকজন বলেন, ‘বাস স্টপেজে বাসগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, এর কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। এগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেয়া যাবে না।’
এদিকে রাজধানীতে গণপরিবহন সমন্বয় করার কথা ছিলো বহু বছর ধরেই। অর্থাৎ বাস, মেট্রোরেল, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর থেকে একই রুটে সেবা পাবেন নগরবাসী। কিন্তু সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে গেছে। আর গণপরিবহনের সাথে জড়িত কর্তা ব্যাক্তিরা বলছেন ভিন্ন কথা।
তাদের অভিযোগ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ ডিটিসিএর সকল পরিকল্পনায় নেই ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি। ফলে তাদের সাথে সমন্বয় ছাড়াই ডিজাইন করা হচ্ছে বিভিন্ন রুট। তাই দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ আল লতিফ বলেন, ‘আমাদের যে রুট ডিজাইন ডিটিসিএ করেছে তা আমাদের সাথে আলোচনা করে করেনি। তাদের এই ডিজাইনের সাথে আমাদের ব্যবসায়িক ইন্টারেস্ট এর মিল নেই।’
এ বিষয়ে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প পরিচালক ধ্রুব আলমের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
ধ্রুব আলম বলেন, ‘রুট সমন্বয় ডিজাইন সকলের অবগতি নিয়েই করা হয়েছে। আপাতত এসি বাস দিয়ে একটি রুটে নগর পরিবহন বাস পরীক্ষামূলকভাবে চলছে।’
তিনি বলেন, ‘বোর্ড সভায় এই পরিকল্পনার বিষয়ে জানানো হয়েছে। তাই এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই, বলার সুযোগ নেই যে জানিনা।’
এছাড়াও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিটিসিএ বদ্ধপরিকর। জানান, ইদের পর অন্য রুটগুলোতেও পুরোদমে নগর পরিবহন চলাচল করবে।
এছাড়া অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন বাসগুলো যেনো রাস্তায় না থাকতে পারে সে বিষয়ে শিগগিরই কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে আইনশৃংখলাবাহিনী।
এদিকে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহন সমন্বয় করতে হলে শুধুমাত্র প্রকল্প নয়, তা বাস্তবায়নে থাকতে হবে মনিটরিং ব্যবস্থা। একই সাথে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা করারও কথা বলেন তারা।
তারা বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত গণপরিবহন করার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামসুল হক বলেন, ‘অন্তরবর্তীকালীন সরকার যখন দায়িত্ব নেয় তখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য তাদের হাতে সুবর্ণ সুযোগ ছিল, কিন্তু এখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত এটার বিশৃঙ্খলা বাড়ছে, এতে একটা গোষ্ঠীর আয় বাড়ছে।’
এছাড়াও গণপরিবহন খাতকে মেট্রোরেলের মত নিজেদের আওতায় এনে একটি কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালনা করার কথাও বলেন তারা।