২০০৮ সালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় ব্যবসায়ী রাজীবুল আলমের দুচোখ উপড়ে ফেলে সন্ত্রাসীরা, কেড়ে নেয় চোখের আলো। এই ঘটনায় ডেমরা থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন তার পরিবার। বিচার পেতে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে বছরের পর বছর। দীর্ঘ তদন্ত, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৬ বছর পর ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।
দীর্ঘ ভোগান্তির পর রাজীবুল তার মামলার রায় পেলেও এমন লাখ লাখ বিচার প্রার্থী রয়েছেন যারা বিচার পেতে প্রতিদিনই ঘুরছেন আদালতে। প্রকৃত ভুক্তভোগীদের বিচার পেতে তাহলে কেনো এতো ভোগান্তি?
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘আগে ধরেন আদালতগুলো একবেলা উঠতো, এখন দুইবেলা আদালত হচ্ছে। কিছু বিচারকের এখানে প্রয়োজন।’
উচ্চ আদালত কিংবা নিম্ন আদালত। বছর ঘুরলেই বাড়ছে মামলার সংখ্যা। সুপ্রিম কোর্টের তথ্য বলছে, ২০১৫ সালে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলা ছিল প্রায় ১৩ হাজার। যা ২০২৪ সালে এসে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৭ হাজারে।
২০১৫ সালে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন মামলা ছিল প্রায় ৪ লাখ। যা ২০২৪ সালে এসে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫ লাখে। এছাড়া, ২০১৫ সালে নিম্ন আদালতের জেলা ও দায়রা জজসহ সব ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা ছিল প্রায় ২৭ লাখ। ৯ বছরে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮ লাখে। সব মিলিয়ে বিচার বিভাগের কাঁধে ঝুলছে প্রায় ৪৪ লাখ মামলা।
আইনজীবীরা বলছেন, মামলা জট বাড়ার প্রধান কারণ, মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, তদন্তে সময় নেয়া, সময় মতো সাক্ষী হাজির না মতোর একাধিক কারণ। পাশাপাশি মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যাও অনেক কম।
জট নিরসনে দেড় দশকে নানা মহল থেকে বিচার-সংশ্লিষ্ট কিছু আইন সংশোধনে সুপারিশ করা হলেও বিগত সরকারের উদাসীনতায় তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। আইনজীবীরা বলছেন, শুধু রাজনৈতিক মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে বাড়তি নজর ছিল আওয়ামী সরকারের।
পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী, ‘ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রহসনমূলক বিচার করা এটাই ছিল আদালত। এটার চাপের কারণে জনসাধারণের যে মামলাগুলো চাপা পড়ে গিয়েছে এবং দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়েছিল।’
এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মামলার জট কমানোর পাশাপাশি অপরাধও কমাতে হবে বলছেন আইন সংশ্লিষ্টরা।