রাজনীতিতে আজ যে শত্রু, কাল সে মিত্র। নেই স্থায়ী কোনো বন্ধু, নেই স্থায়ী শত্রুও। আজ যার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই, কাল তাকেই দেখা যায় প্রতিপক্ষের আসনে। এ যেমন বিএনপি-জামায়াতের কথাই ধরা যাক, দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ভোটের মাঠে, রাজনীতির মাঠে সঙ্গী ছিল দল দুটি। আর এখন তাদের যোজন যোজন দূরত্ব। তবে চব্বিশ পরবর্তী জামায়াতের উদীয়মান মিত্র জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গেও সম্পর্ক যে তিক্ততায় গড়াবে, তা হয়তো জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান না আসলে এতটা প্রকাশ্যে হতো না।
জাতীয় নাগরিক কমিটি, পরবর্তীতে যা এনসিপি- একসময় এখানে সাবেক শিবির নেতাদের আধিপত্য থাকলেও দিন যত গড়িয়েছে ততই চিড় ধরেছে জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের। তবে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তির দাবি নিয়ে দল দুটো আবারও কাছাকাছি আসতে শুরু করেছিল। বিশেষ করে গণভোট, সংবিধান আদেশ বা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন- এসব বিষয়ে এনসিপি এবং জামায়াতের প্রস্তাব কিংবা অবস্থান প্রায় কাছাকাছি। আলাদা আলাদা হলে একই ইস্যুতে রাজপথে সরবও ছিল দল দুটি।
আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না করা হলে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবে না এনসিপি, এটাই বলে আসছিল দলটির নেতারা এবং শেষ পর্যন্ত, সেটিই ঘটলো। কিন্তু এমন আভাসও ছিল- জামায়াতও হয়তো স্বাক্ষর করবে না জুলাই সনদে। কিন্তু শেষমেষ জুলাই সনদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয় জামায়াত যখন হাসিমুখে সাক্ষরে করে ফেলে, তখন মন ভাঙতে শুরু করে এনসিপি নেতাদের। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন তারা।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ফরিদুল হক বলেন, ‘একটা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য যে পরিমাণ উৎসাহ, উচ্ছ্বাস দেখা গেলো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এটা কিছুটা হতাশার। বাংলাদেশের জনগণকে একটা নতুন বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাওয়াটাই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান দায়িত্ব। সে জায়গাটা তারা কতটুকু পালন করতে পারলেন আর এনসিপি কতটুকু ইতিহাসের পক্ষে থাকলো বা ইতিহাসের ভুল পথে থাকলো সেটা আমার মনে হয় বিচারটা জনগণ করতে পারবে।’
সামাজিক মাধ্যমে এনসিপি নেতাদের নানা মন্তব্যে অনেকটা এমন অর্থ দাঁড়ায়, বিএনপির স্বাক্ষরে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া না থাকলেও, জামায়াতের স্বাক্ষর নিয়ে বেজায় চটেছেন তারা।
আরও পড়ুন:
ফরিদুল হক বলেন, ‘জামায়াতও এটার সঙ্গে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। জামায়াতের নেতারা উচ্চকণ্ঠ ছিলেন যে, তারাও আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেন না। এটা বলেছিলেন। শেষ মুহূর্তে তারা এটা কেন করলেন, তা তারাই ভালো জবাব দিতে পারবেন। তবে তাদের উচিত ছিল যে তারাও আসলে এ জিনিস নিশ্চিতের ব্যাপারে অনড় থাকতেন তাহলে জিনিসটা আরও গতি পেতো।’
যদিও জামায়াত নেতা শিশির মনির বলছেন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দুই একদিনের মধ্যেই পাবে- এ আশায় স্বাক্ষর করেছেন তারা।
শিশির মনির বলেন, ‘পরবর্তীতে একটা দেশ জারি হবে। ওই আদেশের ভিত্তিতে একটা গণভোট হবে। গণভোটের পর একটা সংসদ হবে। ওই সংসদের দুইটা ক্ষমতা থাকবে। প্রথম ক্ষমতা হবে তার সাংবিধানিক পাওয়ার আর দ্বিতীয় ক্ষমতা হবে তার সাধারণ সংসদ হিসেবে কাজ করার। তাহলে এ ধাপগুলো অতিক্রম করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর।’
এসময় তার কাছে প্রশ্ন ছিল জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এনসিপির অনুপস্থিতি আর জামায়াতের উপস্থিতি- এ নিয়ে যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে তার মূল্যায়ন কী?
শিশির মনির বলেন, ‘পরবর্তী পদক্ষেপটা স্পষ্ট হলে এনসিপিও এখানে স্বাক্ষর করবে বলেই আমরা আশা করি। পরবর্তী পদক্ষেপটা খুব দ্রুতই যদি স্পষ্ট হয়ে যায় তাহলে আমার ধারণা আর কোনো মত পার্থক্য থাকবে না। এক্ষেত্রে জামায়াত এবং এনসিপির মধ্যে এটাকে কেন্দ্র করে কোনো দূরত্ব তৈরি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।’
জামায়াতের এ নেতার আশা, এনসিপিও হয়তো অচিরেই স্বাক্ষর করবেন জুলাই জাতীয় সনদে।




