জাতীয় নাগরিক কমিটির নতুন দল: আত্মপ্রকাশের আগেই নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ

নেতাদের দাবি অর্ন্তকোন্দল নয় এটি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা

বিশেষ প্রতিবেদন
রাজনীতি
0

চলতি সপ্তাহে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে গঠিত এ দলের আদর্শ হবে মধ্যমপন্থার। চর্চা হবে গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা। তবে আত্মপ্রকাশের আগেই দলটির নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি, এটি অর্ন্তকোন্দল নয় বরং নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা। এদিকে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন দলকে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার আহ্বান রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের।

দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার কবল থেকে মুক্ত হতে লাখো প্রাণ যেদিন এক হয়েছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, সেদিন ঘোষণা হয়, এক নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার।

তার এক মাস পর সেই শহীদ মিনার থেকে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের সমন্বয়ে যাত্রা শুরু করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে গঠিত এ কমিটিতে যোগ দেয় গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র শিবির, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন, রাষ্ট্রচিন্তা, ছাত্র মজলিস, এবি পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, কওমি অনুসারী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সমাজকর্মী ও পেশাজীবী।

অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে এই প্লাটফর্ম থেকে আগামী সপ্তাহে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নতুন এক রাজনৈতিক দল। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা ধর্মভিত্তিক নয় বরং দায় ও দরদের রাজনীতি হবে বাংলাদেশ পন্থাকে সামনে রেখে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ তারা পাহাড়ে বাস করুন আর সমতলে বাস করুন সকলের মধ্যে যাতে বাংলাদেশ পন্থা মূল বিষয় হয়ে ওঠে সেটাতেই আমরা ফোকাস করতে চাই।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, ‘১৫ সালের ভ্যাটবিরোধী, ১৮ সালের নিরাপদ সড়ক একই সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলন। এবং সবশেষ ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদের পতন ছাত্রদের এবং নিরপেক্ষ ব্যানারে হয়েছে। অর্থাৎ গত ১০ বছরে নতুন প্রজন্মের মধ্যে নতুন রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে।’

তবে যাত্রা শুরুর আগেই সম্প্রতি দলটির নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছে। নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে সবার পছন্দ হলেও বাকি তিনটি শীর্ষ পদ নিয়ে ছাত্রশক্তি, ছাত্রশিবির ও বামপন্থাসহ কয়েকটি বলয় তৈরি হয়েছে।

এসব পদের জন্য আলোচনায়, আখতার হোসেন, সাবেক শিবির নেতা আলী আহসান জুনায়েদ, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন। তবে বিভক্তি নয় বরং এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বলে মত সংগঠনটির নেতাদের।

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, ‘যেহেতু একবারে কোর স্টেকহোল্ডার হলো ইসলামী ছাত্রশিবির এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, তো এরা যখন আবার নিজেদের মধ্যে কার কি ভূমিকা ছিল এ আলোচনায় আসছে তখন মনে হচ্ছে যে বড় ধরনের ক্যাওয়াজ তৈরি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন যে দলটা হচ্ছে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের রাজনীতি করবো, অর্থাৎ মাটির রাজনীতি করবো। দায় ও দরদের রাজনীতি। এখন অন্যরা যদি মনে করে তাদের আলাদা আরেকটা ভালো আইডিওলজি আছে তারা আরেকটি দল গঠন করতে পারে।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে উই আর ইউনাইটেড। তবে ২৪ এর পর সবাই সুযোগ পেয়েছে, সবাই সবার মতামত পেশ করছে। ইন্টার্নালি কারো সঙ্গে কারো সমস্যা নেই।’

রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা, লোভ লালসার ঊর্ধ্বে ত্যাগের মানসিকতা রাখার পাশাপাশি ঢাকা কেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে সরে আসার পরামর্শ এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল যদি ‍শুরু থেকেই ইমেজ সংকটে পড়েন, তাদের ইমেজ নিয়ে যদি জনমনে প্রশ্ন থাকে তাহলে জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারবে বলে মনে হয় না।’

তিনি বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকার জন্য আদর্শবাদী নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে। যারা তাদের আদেশের প্রতি অবিচল থাকবেন এবং তারা যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকবেন।’

নতুন রাজনৈতিক দলের কাছে জনগণের প্রত্যাশা কেমন, এ নিয়ে জনমত জরিপ 'আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ' শীর্ষক কর্মসূচি শুরু হয়েছে ৫ ই ফেব্রুয়ারি। এখন পর্যন্ত এ জরিপে অংশ নিয়েছেন দুই লাখের বেশি মানুষ। আর ইতোমধ্যে গঠন হয়েছে ৩ শতাধিক থানা কমিটি।

এএইচ