চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবন কারও কাছে পরিচিতি কেবল ক্যান্টিন হিসেবে, কারও কাছে টেবিল টেনিস খেলার স্থান আবার কেউ কেউ এটিকে ডাকেন কমিউনিটি সেন্টার হিসেবেও। কারণ প্রায়ই এখানে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজনও হয়।
অথচ এ ভবন হওয়ার কথা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের কেন্দ্রস্থল। ১৯৯০ সালের পর ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় এটি এখন পরিত্যক্ত ভবন। এ ভবনের সবশেষ নির্বাচিত ভিপি নাজিম উদ্দিনও এখন আর বেঁচে নেই।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলার কেউ থাকুক, আমরা এটা প্রত্যাশা করি। সে জায়গা থেকে আমরা চাই ক্যাম্পাসে দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু হোক।’
গেলো ৩৫ বছর ধরে চাকসুর নির্বাচনের দাবিতে নানা আন্দোলন হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন ও ব্যতিক্রম। গণঅভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সমস্ত সংগঠনই নির্বাচনের দাবিতে একাট্টা।
সাধারণত, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার, হল দখলসহ বিভিন্ন কারণে ছাত্র সংগঠনগুলোর কোন্দল যেন চিরচেনা দৃশ্য। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডান, বাম, মধ্যপন্থি সব সংগঠনের নেতারা বসছেন এক টেবিলে। পারস্পরিক চিন্তা, মত আর আদর্শের পার্থক্য ভুলে দাবি তুলছেন চাকসু নির্বাচনের।
হলে অবস্থান করা একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা ছাত্র সমাজের যে দাবি, সেটা পূরণ করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে আমরা আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা শিগগিরই চাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন।’
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, চাকসু নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ। প্রয়োজন প্রশাসনের সদিচ্ছা। জুন-জুলাই টার্গেট করেই দাবি আদায়ে ধারাবাহিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চান তারা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আসলে ছাত্র সংসদ না থাকলে প্রশাসন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে করতে পারছেন। সেজন্য তারা এটা একটা অজুহাত দেখাচ্ছে মাত্র।’
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে গত ডিসেম্বরে সাত সদস্যের নীতিমালা কমিটি গঠন করা হয়েছে। নীতিমালা তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত। পরিবেশ নিয়েও সন্তোষজনক প্রশাসন। আসন্ন সমাবর্তন শেষেই নির্বাচনের কার্যক্রম শুরুর কথা জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘পুনর্লিখন করে একটা নীতিমালা তৈরি করছি। সেই নীতিমালার ড্রাফট একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আমাদের কনভোকেশনের পরপরই প্রতিটি ক্রিয়াশীল সংগঠনের সাথে আমরা বসব। ক্যাম্পাসে অনেকগুলো সংগঠন আছে, যারা শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। আমাদের লিস্ট করা সংগঠন আছে, আমরা তাদের আহ্বান জানাব।’
১৯৭০ সালে প্রথম চাকসু নির্বাচন হয়। এরপর দীর্ঘ ৫৮ বছরে মাত্র ছয়বার। সবশেষ ১৯৯০ সালে নির্বাচিত ভিপিও এরই মাঝে মারা গেছেন। অথচ তারপরও নতুন নেতৃত্ব পায়নি চাকসু। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনায় আগামীতে ছাত্র সংসদই হবে নেতৃত্ব তৈরির কারিগর, এমনটাই আশা শিক্ষার্থীদের।