কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
দেশে এখন
0

হবিগঞ্জে ধানের পাইকার-ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য

সরকার প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ২৮০ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু হবিগঞ্জে পাইকার আর ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে ধান। এতে চাষিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।

হাওরের হাওয়ায় এখন পাকা ধানের ম-ম গন্ধ। নতুন ফসলের ঘ্রাণে, কিষান-কিষানির চোখে-মুখে নির্মল হাসি। কেননা সারা বছরের 'খোরাকি' থেকে শুরু করে এই ধানের অর্থেই সন্তানের লেখাপড়া, মেয়ের বিয়েশাদি, বৃদ্ধ মা-বাবার চিকিৎসাসহ পরিবারের আনুষাঙ্গিক খরচ মিটবে।

তবে অর্থের প্রয়োজনে স্বপ্নের এই ধান ঘরে তোলার আগেই যখন মাঠ থেকে কম মূল্যে বিক্রি করতে হয়, তখন সেই আনন্দে যেন ভাটা পড়ে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার হবিগঞ্জের হাওরগুলোতে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। তবে পাইকার ও ফড়িয়াদের দৌরাত্মে ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।

প্রতি মণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ ৮০০ টাকার বেশি। সেই হিসাবে সরকার এবার প্রতি মণ ধানের দাম হাজার টাকার বেশি নির্ধারণ করেছে। কিন্তু পাইকার ও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

চাষিরা বলেন, ‘ধানের যে দাম পাচ্ছি, আমাদের পোষায় না। আর আমাদের ধান কাটা শেষ হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কেনা শুরু হয়নি। এই সুযোগে পাইকাররা কম দামে ধান কিনে নিচ্ছে।’

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এরই মধ্যে হাওরের ৬৮ শতাংশ ধান কাটা শেষ। তবে এখনও সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হয়নি। এমনকি জেলা থেকে কি পরিমাণ ধান কেনা হবে তাও নির্ধারণ করা হয়নি। যদিও খাদ্য কর্মকর্তা বলছেন, আগামী ৭ মে থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে।

হবিগঞ্জে প্রতি বছর যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার ১৮ থেকে ২০ শতাংশ কিনতে পারে সরকার। বাকি ৬০ শতাংশের বেশি ধান পাইকার বা ফড়িয়াদের কাছেই বিক্রি করতে হয়। কৃষকরা বলছেন, যদি সরকার বৈশাখের শুরুতেই পাইকারি পর্যায়ে ধানের দাম নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন তারা।

হবিগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন কমিটির সভাপতি পীযূষ চক্রবর্তী বলেন, ‘সরকার যদি কৃষকদের সঙ্গে দাম নির্ধারণ করতো তাহলে ভালো হতো। আর এটিই হওয়া উচিত ছিলো। অথচ দুঃখের বিষয়, কৃষক চাষ করলেও দাম কতো হবে সেটা তারা নির্ধারণ করতে পারে না।’

জেলায় এ বছর ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যেখানে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ২০ হাজার ৬৫০ টন, যার বাজারমূল্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।