কৃষি , মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ
দেশে এখন
0

বন্যায় শুধু চট্টগ্রামের মৎস্যখাতে ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা

ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামে মৎস্যখাতের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য প্রকল্প মীরসরাইয়ের মুহুরি প্রজেক্টে। বানের জলে ভেসে গেছে হাজার হাজার টন মাছ পোনা। ফলে আগামীতে মাছ চাষের পোনার সংকট হতে পারে বলে শঙ্কা মৎস্যচাষি এবং মৎস্য কর্মকর্তার। সংকট সামাল দিতে চাষিদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা এবং দ্রুত পোনা সরবরাহই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

কথায় আছে, 'কারো সর্বনাশ, আর কারো পৌষ মাস'। আর তার বাস্তব উদাহরণ হলো বন্যায় ভেসে যাওয়া চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের মুহুরি প্রজেক্টের হাজার হাজার টন মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।

চট্টগ্রামের মীরসরাই এবং ফেনীর আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত দেশের সর্ববৃহৎ মৎস্য প্রকল্প মুহুরি প্রজেক্ট। ফেনী নদীতে বাঁধ দেয়ায় ছয় হাজার একর চরে গড়ে উঠেছে এই প্রকল্প। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা সেই বাঁধ উপচে এখানকার জলাশয়ে প্রবেশ করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রজেক্টের প্রায় ৯০ শতাংশ। বানের জলে ভেসে যায় মাছ। যা এখনও ফেনী নদী হয়ে চলে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। সেই মাছ ধরতেই ফেনী রেগুলেটর অংশে এখন উৎসবের আমেজ।

মাছ ধরতে আসা একজন বলেন, 'রুই, কাতল, ব্রিগেড, তেলাপিয়া মাছ পেয়েছি। গত চার থেকে পাঁচদিন হলে প্রচুর মাছ হচ্ছে। বিভিন্ন প্রজেক্ট আর মাছ চাষের যে পুকুরগুলো উপচে এই মাছ আসছে।'

এই অবস্থা থেকেই আঁচ করা যায়, বন্যায় চট্টগ্রাম জেলার কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মুহুরি প্রজেক্ট থেকেই মীরসরাই ও আশপাশের এলাকাসহ চট্টগ্রামের ৭০ ভাগ মিঠা পানির মাছের জোগান দেয়া হয়। দৈনিক কোটি কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয় এখানে। এখানকার মৎস্য চাষিদের বিনিয়োগও বিপুল। কিন্তু, বন্যায় শত কোটি টাকার সম্পদ হারিয়ে অনেকেই এখন দিশেহারা হয়েছেন।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'আমার যতগুলো মাছ চাষের পুকুর ছিল সবগুলো শেষ। সবগুলোতে মাছ রেডি ছিল, কয়দিন পর বিক্রি করতাম সব। বন্যার কারণে সব মাছ বের হয়ে গেছে।'

রুই-কাতল, মৃগেল, শিং-পাবদা ও তেলাপিয়াসহ অসংখ্য প্রজাতির মাছ চাষ হয় এই মুহুরি প্রজেক্টে। একইসাথে উৎপাদিত হয় মাছের পোনাও। যা সরবরাহ করা হয় সারাদেশে। কিন্তু বন্যায় সেই পোনাও ভেসে গেছে। ফলে মাছ চাষের জন্য নতুন পোনা প্রাপ্তিও কষ্টসাধ্য হবে। এছাড়াও ব্রুড মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুমও নয় এখন। তাই নতুন পোনা কিভাবে মিলবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তা আছে চাষীদের।

একজন চাষী বলেন, 'বন্যার কারণে তো আমাদের বস পোনা মাছও চলে গেছে। এখন বন্যার কারণে সব ভেঙ্গে গেছে সেগুলো মেরামত করতে হবে।'

বড় বড় প্রজেক্টের ব্যবসায়ীরা মূলত ব্যাংক ঋণ নিয়েই ব্যবসা করে থাকেন। কিন্তু, হঠাৎ সৃষ্ট দুর্যোগে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে লাভ এবং পুঁজি দু'টিই হারিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ সংকট থেকে উত্তরণে প্রশাসনকে পাশে চান তারা। আছে ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফের দাবিও।

মৎস্য বিভাগ বলছে, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মাছ ও মাছের পোনার ক্ষতি হয়েছে। আঘাত পড়েছে অবকাঠামোতেও। যদিও বন্যার পানি পুরোপুরি না নামায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, 'উন্মুক্ত জলাশয়ে পোনা ছাড়ার জন্য আমাদের মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রতিবছরই একটা কার্যক্রম থাকে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই চাষীদের এই প্রোগ্রামের আওতায় যেন পোনা দিতে পারি সেই বিষয়ে একটা সাজেশন তাকবে মাঠ পর্যায় থেকে। এবং আমাদের কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সেটা বিবেচনা করবেন আশা করি।'

এদিকে বন্যায় হালদার বহু মাছ বেরিয়ে গেছে। আবার কৃত্রিম জলাশয়ের বহু মাছ হালদায় মিশেছে। এ অবস্থায় বন্যায় এলোমেলো হয়ে যাওয়া মৎস্যখাত গুছিয়ে আনতে সময়ের প্রয়োজন বলছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।

tech