নাহিদ ইসলামের রাজনীতিক হয়ে ওঠার গল্প

0

সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা পদ্ধতির সংস্কার হবে এমন এক আন্দোলন থেকে সরকার পতনের দাবি উঠে আসা এবং ১৫ বছর থেকে ক্ষমতায় থাকা ফ্যাসিস্ট সরকার পতন হওয়া পর্যন্ত যে তরুণেরা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন নাহিদ ইসলাম। আন্দোলনে হাজারো নির্যাতন সহ্য করেও দেশকে ফ্যাসিস্টের হাত থেকে রক্ষা করতে পিছপা হননি তিনি। শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে দেশের সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা পদে অধৃষ্ট হন। সাত মাস নিজের দায়িত্ব পালন করে আজ পদত্যাগ করলেন তিনি। জাতিকে নেতৃত্ব দিতে যোগ দিচ্ছেন নতুন রাজনৈতিক দলে।

বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুতে নাহিদ ইসলাম ততটা পরিচিত মুখ ছিল না। আন্দোলন যখন তুঙ্গে ঠিক তখনই জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে তাকে অপহরণ করা হয়। রাতের আঁধারে খিলগাঁও থেকে তুলে চোখে কালো কাপড় পেঁচিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পতিত সরকারের টর্চার সেল খ্যাত আয়না ঘরে। তখনই দেশব্যাপী তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে তাকে দুবার আটক করা হয়। এ সময় নির্যাতনেরও শিকার হন তিনি।

স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করে জাতিকে নেতৃত্ব দিতে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ড. ইউনূসকে প্রধান করে ২৩ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। এই উপদেষ্টা পরিষদে নিযুক্ত হন ২৬ বছরের তরুণ নাহিদ ইসলাম। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ৯ আগস্ট ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৬ আগস্ট থেকে তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আরো পড়ুন:

সংস্কারের লক্ষ্যেই নিজ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার ঘোষণা দেয়। গুঞ্জন ওঠে নাহিদ ইসলাম হতে যাচ্ছেন এই দলের আহ্বায়ক। আর তাই দল ঘোষণার আগেই তিনি উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সেসময় জানিয়েছিলেন পদত্যাগ করেননি তিনি।

এরই মধ্যে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিরা। আর এর আগেই আজ উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন নাহিদ। ধরা হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকবেন তিনি।

আরো পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করা নাহিদ '২৪ এর গণভ্যুত্থানেই শুধু তারকা ছিলেন না, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন নাহিদ ইসলাম। তবে নেতৃত্বে ছিলেন না। ওই সময়ের আন্দোলন চলাকালে নাহিদের এক সহপাঠী ও সিনিয়র শিক্ষার্থীকে সাদা পোশাকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেলে নাহিদ আন্দোলন গড়ে তোলেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের বাধার মুখে পড়তে হয় তাকে।

২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে নুরুল-রাশেদ-ফারুক প্যানেল থেকে নাহিদ নির্বাচনে অংশ নেন। নাহিদ সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে তিনি জয়ী হননি। যদিও পরে মতবিরোধের কারণে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।

২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নির্দলীয় ছাত্র সংগঠন 'গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি' আত্মপ্রকাশ করে। এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ছিলেন নাহিদ ইসলাম।

ইএ