কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষেই দেশের লাইফ লাইন চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি, ইয়ার্ড এবং অন্যান্য স্থাপনার অবস্থান। তাই কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা রক্ষা করা বন্দর এবং অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানির সাথে ৬০ লাখ নগরবাসীর ফেলা পলিথিন, প্লাস্টিক, গৃহস্থালি ও পয়োবর্জ্য এসে পড়ছে নদীতে। ৩৭টি খাল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার টন কঠিন বর্জ্য পড়ে ভরাট হচ্ছে নদী। এতে বাকলিয়া ও নতুন ব্রিজ এলাকায় পলি জমে নদীর নাব্যতা কমায় ওই অংশে নৌযান চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। আর বর্ষায় ডুবে যায় নগরী।
এই প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালে ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মালয়েশিয়ান একটি প্রতিষ্ঠানকে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ দেয় চট্টগ্রাম বন্দর। তবে অনভিজ্ঞতার কারণে অর্ধেক কাজ রেখেই চলে যায় ঠিকাদার। পরে ২০১৮ সালে 'সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত ড্রেজিং করতে ২৪২ কোটি টাকায় নৌবাহিনীকে কাজ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সে ব্যয় বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯৫ কোটি টাকায়। ইতিমধ্যে ৫৫ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য ও পলি খননের কাজ শেষ। তবে আটটি খালের মুখে পলিথিন প্লাস্টিকসহ সাত মিটারের বর্জ্যের স্তর খনন করতে গিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার সামসিত তাবরীজ বলেন, 'আমাদের এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে তাদের বিভিন্ন জাহাজের যে চলাচল সেটা নিশ্চিত করছি। এর সাথে বিভিন্ন প্লাস্টিক বর্জ্য ও অন্যান্য যে বর্জ্য আসছে, সেগুলো সড়ানোর মাধ্যমেও আমরা আমাদের চট্টগ্রাম শহারে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছি।'
খননের কারণে বর্তমানে লাইটারেজ জাহাজ নোঙর ও ফিশিং বোট নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারায় খুশি ব্যবসায়ী ও জেলেরা।
একজন জেলে বলেন, 'কাদামাটি চিল একদম মাঝখানের খাম্বা থেকে। এদিকে কোনো জাহাজ চলাফেরা করতে পারতো না। মাটি কাটার ফলে এখন জাহাজ চলাচল করছে। নৌ চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।'
তবে বর্জ্য নদীতে পড়া রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সারা বছরই নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে। এক্ষেত্রে জোয়ারের পানি নগরীতে প্রবেশ ঠেকাতে সিডিএ বিভিন্ন খালের মুখে স্লুইসগেট নির্মাণ করলেও সেগুলো যথেষ্ট প্রশস্ত নয় বলে অভিযোগ বন্দর কর্তৃপক্ষের।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সিনিয়র হাইড্রোগ্রাফার মো নাসির উদ্দিন বলেন, 'ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে আমরা পানির ফ্লোটা ঠিক রেখেছি। শহরের ভেতরের অংশে যদি সিলট্রেশনের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে মানুষের ব্যবহৃত বর্জ্যগুলো যদি সরাসরি নদীতে না আসে তাহলে নদীর সিলট্রেশনের হার অনেক কমে যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের ডেজিংয়ের খরচও অনেক কমে আসবে।'
আগামী জুনের মধ্যে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে আরো সাত লাখ ঘনমিটার মাটি তোলা হবে নদী থেকে। তবে নদীতে বর্জ্যের প্রবেশ আটকাতে গার্বেজ ট্র্যাপ নির্মাণের আহ্বান চট্টগ্রাম বন্দরের।