উপমহাদেশে শবে বরাতের প্রচলন যেভাবে শুরু

দেশে এখন
0

একটি রজনীর জন্য অপেক্ষা একটি বছরের। এ রাত প্রার্থনার, একে অপরের সঙ্গে স্নিগ্ধ আলিঙ্গনের। পাপমোচনের এই রাতে আছে সম্প্রীতি, যা ধর্মভীরুদের কাছে ভাগ্যরজনী। ব্রহ্মাণ্ডের মহাশক্তিমানের করুণা পেতেই বিনিদ্র ইবাদতে নিমজ্জিত থাকে মুসল্লিরা।

উপমহাদেশে ধর্মীয় আচারের বাইরেও শবে বরাত ঘিরে থাকে নানা আয়োজন, থাকে আলোকসজ্জা-আতশবাজি। আবার পরিবার ছেড়ে যারা কবরবাসী তাদের জন্যও করা হয় বিশেষ প্রার্থনা। মুসলিম পরিবারে রুটি-হালুয়া তৈরির রেওয়াজ তো আছেই। সামর্থ্য বিবেচনায় ছিন্নমূল মানুষদের দান করা এই রাতের অন্যতম অনুষঙ্গ।

নবী মুহাম্মদ শাবান মাসের ১৪ তারিখ নফল নামাজ পড়ার পাশাপাশি কবর জিয়ারত করতেন। তিনি যে মিষ্টি খুব পছন্দ করতেন তা সবারই জানা। ফলে মিষ্টি হিসেবেই হালুয়া বানানো শুরু হয়। আর আনন্দ ভাগাভাগি করতেই তা বিতরণের উৎপত্তি।

মূলত এই রাত থেকেই শুরু হয় রমজানের ক্ষণগণনা। ভৌগোলিক বিচারে শবে বরাত পালনে তেমন কোনো ভিন্নতা না থাকলেও উপমহাদেশে শবে বরাতের সূচনালগ্ন নিয়ে আছে মতভেদ। তাহলে অখণ্ড ভারতবর্ষে এই শবে বরাতের প্রচলন কীভাবে হয়েছিল?

গবেষকদের মতে ইসলাম ধর্মের উৎপত্তির সময় থেকে শবে বরাত পালনের প্রথা শুরু হলেও উপমহাদেশে এর প্রচলন শুরু হয় অনেক পরে। তবে এই চল শুরু হওয়ার সময়ের কোনো দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শামসুদ্দিন মিরার লেখায় এর সবচেয়ে পুরোনো নথি পাওয়া যায়। আবার গবেষণা ধর্মী বই 'ইমপ্যাক্ট অব হিন্দু কালচার অব মুসলিমসে' দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীতে শবে বরাতে হালুয়া-রুটি তৈরি ও বিতরণের প্রমাণও মিলে।

পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতকের বিভিন্ন লেখায় এর বিস্তারিত প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে অনেকেই মনে করেন উপমহাদেশে শবে বরাত পালনের প্রচলন শুরু হয় অষ্টম শতকে। কারণ তখন ইসলাম প্রচারে মধ্য এশিয়া ও আরব থেকে ধর্ম প্রচারকরা এসেছিলেন।

এছাড়া সাগরপথে বাণিজ্যের জন্য আসা আরব ও চীনা বণিকদের মাধ্যমেও উপমহাদেশে ইসলামিক আচার-অনুষ্ঠান পরিচিত হয়েছে বলে মতান্তর রয়েছে। ইতিহাস ঘেটে সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলেও ঘটা করে শবে বরাত পালনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তখন মিষ্টি জাতীয় খাবার বিতরণ ও আলোকসজ্জা করা হতো।

ধর্মীয় মহানুভবতা ও সৌহার্দ্যে মিশ্রিত এই শুদ্ধ রজনী যুগে যুগে অর্থবহ করে তুলেছে মানবজীবনকে। যার ধারা সৃষ্টির শেষ পর্যন্ত থাকবে অপরিবর্তিত।

ইএ