দিল্লির সীমান্ত সম্মেলনে আগের মতো নতজানু হয়ে কথা বলবে না বাংলাদেশ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

দেশে এখন
0

দিল্লিতে সীমান্ত সম্মেলনে আগের মতো নতজানু হয়ে কথা বলবে না বাংলাদেশ- জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা; সীমান্তে গুলি বন্ধের তাগিদ। চাঁপাইনবাবগঞ্জে চৌকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা পরে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে কৃষকদের ওপর হামলা ও সম্পদ নষ্ট করা নিয়ে দুদেশের সীমান্তে উত্তেজনা দেখা যায়। বিজিবি ও বাংলাদেশের স্থানীয় বাসিন্দার প্রতিরোধে পিছু হটতে বাধ্য হয় বিএসএফ ও ভারতীয় বাসিন্দারা।

সাম্প্রতিক এই ঘটনা আশার আলো দেখায় ফেলানী বা স্বর্ণা দাশের মতো হয়ত আর কাউকে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলতে হবে না, সীমান্তের ওপারে লাশ হয়ে পড়ে থাকতে হবে না।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সীমান্তে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করার অনুমতি দিয়েছে।

আগামী মাসে নয়াদিল্লীতে ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনেও বাংলাদেশ তার অবস্থান স্পষ্ট করবে। আগের নতজানু নীতি যে আর চলবে না তার স্পষ্ট বার্তা দেবে।

বুধবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে একথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। বলেন, এবারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে সীমান্ত হত্যা বন্ধের ওপর।

উপদেষ্টা বলেন, ‘এবারের বৈঠকে নতুনত্ব হবে আমাদের কথার সুর। আগের মতো নতজানু হবে না। ছাড় দিয়ে আস্থা বৃদ্ধি হয় না, আলোচনার মাধ্যমে আস্থা বৃদ্ধি হয়। সব সমস্যার এক বৈঠকেই সমাধান হবে না।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো কাজ করতে হলে দুই পক্ষে অনুমতি নিতে হয়। এগুলো একপক্ষে করার নিয়ম নাই। যদিও তারা এভাবেই করতে চায়। উন্নয়নমূলকভাবে একটা মসজিদ বা মন্দির করতে হলে দুই দেশের সম্মতি প্রয়োজন হয়। আগামীতে কিছু করতে হলে যেন তারা সম্মতি নেয় এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিক/ভারতীয় দুষ্কৃতকারী কর্তৃক সীমান্ত হত্যা/সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো বা কাউকে আহত করা বন্ধ করার বিষয়ে আলোচনা হবে। সম্মেলনে বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া বা আটক করা বন্ধ করতে আলোচনা করা হবে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক সীমানা লঙ্ঘন বা অবৈধ পারাপার অথবা অনুপ্রবেশ বন্ধে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে বর্জ্য পানি প্রবাহিত হয়, এরকম চারটি খালে পানি শোধনাগার স্থাপন করার বিষয়েও আলোচনা হবে।’

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন, নদী থেকে পানি উত্তোলন, পানি চুক্তি বাস্তবায়ন এবং রহিমপুর খালের মুখ পুনঃউন্মুক্তকরণ নিয়েও আলোচনা হবে।’

২০১০ সালে ভারতের সাথে চুক্তিতে কিছুটা অসম বিষয় আছে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। বলেন, ভারতের সাথে সম্পাদিত সকল অসম চুক্তিতে সমতা ফেরানো নিয়েও আলোচনা হবে।

এসময় ভারতকে কোন ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন বিজিবি মহাপরিচালক। ‘তিনি বলেন, আমাদের জায়গা থেকে আমরা কোনো ছাড় দিবো না।’

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব বলছে, ২০২৩ সালে ৩১ জন বাংলাদেশি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন। যা ২০২১ ও ২০২২ সালে ছিল যথাক্রমে ১৮ ও ২৩। এছাড়া ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল, ১১ বছরে ৫২২ বাংলাদেশি বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন।

এএইচ