ট্রেনের টিকিট দিয়ে বাসের যাত্রী হয়ে গন্তব্যে যাওয়াটা কল্পনাতীত হলেও এমন বিরল অভিজ্ঞতার সাক্ষী চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের যাত্রীরা। রেলের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়া যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে বিকল্প ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ ২৮টি বিশেষ বাসের ব্যবস্থা রেখেছেন।
ট্রেনের আগাম কেটে রাখা টিকিট দেখিয়ে বিআরটিসি বাসে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারছেন। দিতে হচ্ছে না বাড়তি ভাড়া।
একজন যাত্রী বলেন, 'টিকিট কেটেছিলাম মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবো। এসে দেখি ট্রেন কর্তৃপক্ষ রেল বন্ধ রাখছে। ট্রেনের পরিবর্তে বাস দিচ্ছে।'
অন্য একজন যাত্রী বলেন, 'যেতে পারছি এটাতেই খুশি। কিন্তু আমি যে ট্রেনে জার্নি করার জন্য টিকিটটা করছিলাম সে জার্নিটা পেলাম না।'
চট্টগ্রাম বিআরটিসির ম্যানেজার জুলফিকার আলী বলেন, 'ট্রেনের শিডিউল অনুযায়ী আমি বাসের শিডিউল নিয়েছি। সে অনুযায়ী সবগুলো গাড়ি এখানে উপস্থিত থাকবে। আমাদের যে সক্ষমতা আছে সে অনুযায়ী এসি বাস, নন এসি বাস, ছাদ খোলা বাস, ডাবল ডেকার বাস, সবগুলোই আজ সেবায় নিয়োজিত থাকবে।'
এদিকে কর্মবিরতির কারণে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, সিলেট, কক্সবাজার, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনসহ কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। তবে যাত্রা বাতিল হওয়া ট্রেনের টিকিটের টাকা যাত্রীদের ফেরত দিচ্ছে রেলওয়ে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক এ বি এম কামরুজ্জামান বলেন, 'আমরা অলটারনেটিভ ব্যবস্থা হিসেবে বিআরটিসির সাথে যোগাযোগ করেছি। এবং তাদের বাস এখানে রেডি আছে আমাদের এখানে। যদি কোনো টিকিটধারী যাত্রী যেতে চায় তাহলে বিআরটিসি বাসে তারা যেতে পারবেন।'
কর্মবিরতিতে উত্তরের অন্যতম ব্যস্ত রেলপথ বগুড়া রুটেও ট্রেন চলাচল বন্ধ। এতে বিপাকে পড়া যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন জেলার যাত্রী থাকলেও শুধু নওগাঁ ও সান্তাহারগামী যাত্রীরা এই সুবিধা পাচ্ছেন।
বগুড়া বিআরটিসি বাস ডিপোর ভারপ্রাপ্ত ডিপো ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'বিআরটিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে যে তোমরা সবসময় বিভিন্ন রেলস্টেশনের সাথে যোগাযোগ করবে। এবং যারা টিকিট কাটছে তাদের বিনা টিকিটে নিয়ে যাবো, টাকা পয়সা লাগবে না। আমরা বিআরটিসির পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক চেষ্টা করছি যেন যাত্রীর সেবা দিতে পারি।'
এছাড়াও ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে দু'টি বিআরটিসি বাস। যারা রেলের আগাম টিকিটে বাসে চলাচল করতে পারছেন।
এদিকে রাজশাহীর রেলযাত্রীদের জন্য স্টেশন এলাকায় চোখে পড়েনি বিশেষ এ বাস সেবা। তবে, অগ্রিম টিকিটা কাটা যাত্রী বিআরটিসি বাস ডিপোতে টিকিট দেখিয়ে নির্দিষ্ট রুটে যেতে পারছেন। এছাড়াও ফেরত দেয়া হচ্ছে অনলাইন ও অগ্রিম কাটা টিকিটের টাকা।
একজন যাত্রী বলেন, 'কাউন্টার থেকে যারা টিকিট করেছে তাদের জন্য বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করেছে কিন্তু যারা অনলাইন থেকে টিকিট করেছি তাদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করেনি।'
বিকল্প উপায় হিসেবে সিলেট থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদের বিআরটিসি বাসে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার কথা জানান স্টেশন মাস্টার।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মো. নুরুল ইসলাম বলেন, 'প্রতিটি যাত্রী যারা কাউন্টারে টিকিট রিফান্ড দিচ্ছে টাকা সাথে সাথেই নিয়ে যাচ্ছে। যারা অনলাইনে টিকিট কেটেছে তারা অনলাইন ছাড়া টিকিট রিফান্ড পাবে না। আমরা উনাদের পরামর্শ দিয়েছি যে আপনারা অনলাইনে টিকিট রিফান্ড করেন।'
রেলের রানিং স্টাফদের সমস্যা সমাধান করে দ্রুত ট্রেন চালুর দাবি যাত্রীদের।