দেশে এখন
0

নদী রক্ষায় ভূমি-কেন্দ্রিক কূটনীতি থেকে বের হওয়ার আহ্বান

পানি সম্পদ রক্ষা ও ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে ভূমি-কেন্দ্রিক কূটনীতি থেকে সরে এসে বহুমাত্রিক পানি কূটনীতির ওপর জোর দেওয়া উচিত বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আয়োজিত ‘১০ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনে’ এই আহ্বান জানানো হয়। সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘পানির ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্রের ভবিষ্যৎ’।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, নেপাল, সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘নদী কোনো একক জাতির সম্পত্তি নয়। এটি একটি সত্তা, যা এখনো সংকটে রয়েছে। নদীর অধিকার নিশ্চিত করতে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন।’

তিনি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে নদী ব্যবস্থাপনায় একত্রে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিশ্বায়নের ফলে পৃথিবী বদলালেও আমাদের চিন্তাধারায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসেনি। ন্যায্য পানি বণ্টনের জন্য প্রচলিত চিন্তার বাইরে গিয়ে নতুনভাবে কাজ করতে হবে।’

ড. আহমেদ আরো উল্লেখ করেন, ‘ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বাইরে গিয়ে চীনসহ অন্য দেশগুলোকেও আলোচনায় যুক্ত করা প্রয়োজন।’

তিস্তা ইস্যুতে ভারত আমাদের সহায়তা করেনি, কিন্তু এখন চীন বাঁধ নির্মাণ করছে বলে তারা আলোচনা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে বলেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডের লিড স্পেশালিস্ট ড. জন ডোর বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার মতো নদীর পানি বণ্টনে ম্যাকং নদী কমিশনের মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে।’ তিনি গবেষণা ও যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

সম্মেলনের প্রথম দিন তিস্তা ও সীমান্তবর্তী নদীর ভবিষ্যৎ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় উদ্ভাবন এবং

পানি অর্থায়ন ও কূটনীতির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন পানির ন্যায্য বণ্টনের সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হবে। এছাড়া, পানি বিষয়ক শিক্ষা মূলধারায় যুক্ত করা এবং সমুদ্র ও পানিসম্পদ রক্ষায় আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে উপস্থাপন করা হবে।

২০১৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা এগিয়ে নিতে কাজ করছে সংস্থাটি।

নদীর অধিকার নিশ্চিত এবং পানি সংকট মোকাবিলায় তাদের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।

এএইচ