দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি)। শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাদের মতে, নির্বাচনের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। নির্বাচনের আয়োজন না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিকে উপাচার্য বলছেন, দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ সংক্রান্ত কার্যক্রম ও সরকারের নির্দেশনা অনুসারে নেয়া হবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে আলোচনায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্র সংসদ গঠিত না হলেও দাবি উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের। শিক্ষার্থীরা বলছেন, গণতন্ত্র চর্চা, নেতৃত্ব তৈরি ও দাবি-দাওয়া আদায়ে সংসদ নির্বাচনের এখনই সময়।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের সুবিধা, অসুবিধা, কী করা উচিত, কী করা উচিত না, এই কথাগুলো তারা ছাত্র সংসদের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারবে।’
অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচনটা হয় তাহলে এই অধিকারগুলো নিয়ে কথা বলার মতো আলাদাভাবে একজন থাকে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে সকল ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম চালুর দাবি ছাত্র নেতাদের।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. রেজা শরীফ বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার আগে অনতিবিলম্বে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি ওপেন করতে হবে। এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
বরিশাল মহানগর ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক হাসান নাঈম বলেন, ‘এখানে যে রাজনীতির চর্চাটা করে, এটার মাধ্যমে পরে দেশের রাজনীতিতে বড় সেক্টরে সে তার কন্ট্রিবিউশন রাখতে পারে। অতএব এই জায়গা থেকে আমরা ছাত্র শিবির প্রত্যাশা করি যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনটা চালু করা হোক।’
শিক্ষার্থীদের নানা প্রয়োজনে কাজ করে ছাত্র সংসদ। নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে নানা সংকট ও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। এতে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরিতে ছাত্র সংসদের গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো আরও আগে থেকেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে দাবি জানিয়ে আসছে। দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ সকল ছাত্র সংগঠন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি আন্দোলনের সভাপতি মুহা. হাসান মাহামুদ বলেন, ‘ইসলামি ছাত্র আন্দোলনে পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বরাবর অনেকবার জানানো হয়েছে। এবং আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল আহ্বায়ক সুজয় শুভ বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যদি তাদের কথা মলার মতো একটা মুখ তারা তৈরি করতে পারে, তাদের মধ্য থেকে যদি যোগ্য নেতৃত্ব তারা তৈরি করতে পারে তাহলে এ সমস্ত হ-য-ব-র-ল যে কন্ডিশনটা তৈরি হয়েছে আমার মনে হয় দ্রুততম সময়ের মধ্যে এগুলোর সমাধান হয়ে যাবে।’
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, চাইলে এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি বা আয়োজন করতে পারে।
বরিশাল মহানগর ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য যে ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলো আছে তাদের নিয়ে আমরা প্রয়োজনে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বো।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সরকারের নির্দেশনা অনুসারে নেয়া হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ. টি. এম. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে এই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে যদি ছাত্ররা তাদের ধারণা থেকে সরে আসতে চায় সেটাও ছাত্রদের মাধ্যমে আসতে হবে। এবং এ ব্যাপারেও আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শুচিতা শরমিন বলেন, ‘কোনোকিছুর ব্যত্যয় করে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো না। ঠিক একইভাবে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেভাবে এ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিবে সরকারের নির্দেশনা যদি কিছু থাকে তার ভিত্তিতে আমাদের এখানে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি। প্রতিষ্ঠার ১৩ বছরেও এখানে গঠিত হয়নি ছাত্র সংসদ। বর্তমানে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে নয় হাজার। ছয়টি অনুষদে বিভাগ আছে ২৫টি।