পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে যেসব উপাদান দরকার- তার সবই আছে সিলেটে। অপার সৌন্দর্যের মিশেলে গড়ে ওঠা সিলেট যেন- বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্পীর তুলির দৃষ্টিনন্দন এক ক্যাম্পাস। সিলেটে রয়েছে মেঘ পাহাড়ের আলিঙ্গন, নীল জলরাশি, চা বাগানের সবুজ সমারোহ। সেইসাথে দেশের একমাত্র জলারবন রাতারগুল কিংবা ভারত সীমান্ত লাগোয়া জাফলং, বিছানাকান্দি সবসময়ই পর্যটকদের কাছে পছন্দের শীর্ষে।
কিন্তু বিগত সময়ের অব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকভাবে পর্যটক কমছে সিলেটে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়, যার ফলে পর্যটন ব্যবসা নিয়ে শঙ্কায় সংশ্লিষ্ট ব্য়বসায়ীরা।
সিলেট জেলার জাফলং, বিছানাকান্দি, সাদা পাথর এলাকায় পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ী আছেন অন্তত ৫ হাজার। ভরা মৌসুমে পর্যটক আশানুরূপ না হওয়ায় তাদের বেচা বিক্রিতেও পড়েছে ভাটা।
সিলেটের সাদা পাথর হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ব্যবস্থাপক জুয়েল মিয়া বলেন- ৩ বছরে তার হোটেলে পর্যটকদের যে উপস্থিতি থাকতো এবার সে হার কমেছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। ছুটির দিনেও খালি থাকছে হোটেলের কক্ষ।
জুয়েল মিয়া বলেন, গত বছর নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে যথেষ্ট পরিমাণ বুকিং বা অগ্রিম বুকিংও ছিল। এ বছর তুলনামূলক অনেকটাই কম। মূলত পর্যটকের ওপর নির্ভর করে তাদের চলা। যার কারণে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকমাস ধরে পর্যটক কম থাকায় প্রতিনিয়ত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এটিএম শোয়েব বলেন, ‘পর্যটন তো ছোট একটা ব্যাপার না, বিশাল ব্যাপার। প্রত্যেকটি খাতে আগামী দুই মাস আমরা খুব একটা আলোর মুখ দেখছি না।’
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, 'পর্যটন যে মন্ত্রণালয় এটাকে বিমানের সাথে যুক্ত করাতে কোনোটাই এগোতে পারছে না। আমি আগেও বলেছি পর্যটন মন্ত্রণালয়কে আলাদা করা উচিত।’
যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নসহ পর্যটন নিয়ে কোন বিশেষ পরিকল্পনা না থাকায় প্রতিনিয়তই কমছে সিলেটের জৌলুস। এতে সিলেটে অঞ্চলে পর্যটন ব্যবসায় দেশি-বিদেশি হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তিত তারা।
খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, ‘যে পরিমাণ পর্যটক আসার কথা সে পরিমাণ পর্যটক না আসায় আমরা মনে করি বিনিয়োগেও মানুষ বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। সিলেটের পর্যটনকে গতিশীল করতে হলে মন্ত্রণালয়ের কিছু কিছু কাজকে আরো গতিশীল করতে হবে।’
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফয়েজ হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘সিলেটে যদি পর্যটকরা না আসে তাহলে এ ইন্ডাস্ট্রিগুলো কীভাবে বাঁচবে? বাঁচতে হলে পর্যটক আনতে হবে। পর্যটককে আকৃষ্ট করতে হলে দুটি জিনিস লাগবে। একটা হলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন আরেকটা হলো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।’
বিগত এক দশকে সিলেটের পর্যটন নিয়ে নানান পরিকল্পনা হয়েছে কিন্তু পরিকল্পনা বা মহাপরিকল্পনা তার কোন বাস্তবায়নই হয়নি এখনো।
তাই পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন শুধু পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবন্ধ থেকে নয় বরং অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সিলেটকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যটকদের কাছে পরিচিত করে তুলতে পারলে এ অঞ্চলে পর্যটন ব্যবসায় আমূল পরিবর্তন আসবে।