বিশেষ প্রতিবেদন
দেশে এখন
0

গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তনের দাবি ছাত্র প্রতিনিধিদের

আনুপাতিক ও আসনভিত্তিক দুই মাধ্যম রেখেই গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তনের দাবি গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া ছাত্র প্রতিনিধিদের। চাইলে গণপরিষদ পরবর্তীতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বও নিতে পারবে, মত জাতীয় নাগরিক কমিটির। তবে, বিএনপি বলছে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না, যা জাতীয় নির্বাচনের সময়কে দীর্ঘায়িত করে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, দলমতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেই সংবিধানের পরিবর্তন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে।

৭২ এর সংবিধান। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া স্বাধীন বাংলাদেশের পরিচালনার প্রথম ও প্রধান আইন। তবে, গত পাঁচ দশকে এর যেমন বারবার কাটা-ছেঁড়া হয়েছে, তেমনি বিতর্কও কম হয়নি এই সংবিধান নিয়ে।

১৯৭০ সালে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিতদের নিয়ে দেশ স্বাধীনের পর গঠিত হয় গণপরিষদ। লাখো শহীদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ণের দায়িত্ব পরে ৪০৬ জন সদস্যদের ওপর। যার মধ্যে অধিকাংশ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের। মাত্র ৮ মাসে বাংলাদেশ পায় রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল।

দ্রুত সময়ে সম্পাদিত হওয়ায় বাহবা মিললেও, বিরোধীমতের গুরুত্ব না দেয়ার অভিযোগও আছে এই সংবিধান নিয়ে। ৩ বছর যেতে না যেতেই আনা হয় বড় পরিবর্তন। সংসদীয় ব্যবস্থা বাদ দিয়ে আনা হয় বাকশাল তথা একদলীয় ব্যবস্থা।

তখন থেকেই শুরু সংবিধানের কাটা-ছেঁড়া। এরপর যখন যে সরকার এসেছে নিজেদের মতো করে সংবিধানে পরিবর্তন এনেছে। আর এই সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলসহ নানা সংশোধন এনে শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন কর্তৃত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী। যার শেষ হয় ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে। কিন্তু কেন?

জাতীয় নাগরিক ঐক্য কমিটির সারোয়ার তুষার বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী নতুন সংবিধান করার পদ্ধতি হচ্ছে গণপরিষদ কাছে যেতে হবে। এটা সংসদ নির্বাচনের মতো একটা নির্বাচন। ওখানকার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংবিধান প্রণয়ন করবেন। বিভিন্ন দল যেমন সংসদ নির্বাচনে অংশ এখানেও তাই হবে। আমরা একটি মিশ্র প্রস্তাবনা দিয়েছি যার কিছু হোক আসনভিত্তিক এবং কিছু হোক আনুপাতিকভিত্তিক। এভাবে করলে সকলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। আগামী নির্বাচনে যারা জয়ী হবে তারা গণপরিষদ গঠন করবে আর তারাই দেশ পরিচালনা করবে। আর সংবিধান একটা সুনির্দিষ্ট একটা সময়সীমা থাকে।’

পৃথিবীর দেশে দেশে সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদ গঠন নতুন কিছু নয়। তবে, তার গঠন প্রকিয়া আলাদা হয়েছে দেশ ভেদে। এবারের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনের শিক্ষার্থীরা চাইছেন, আসন আর আনুপাতিক এই দুইয়ের মিশ্রণে হোক গণপরিষদ নির্বাচন, যাদের উপর সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকবে সংবিধান পরিবর্তন। ছাত্র প্রতিনিধিদের প্রস্তাব, সব দলের ঐকমত্য থাকলে গণপরিষদের নির্বাচিত প্রার্থীরা পরবর্তীতে দেশ পরিচালনার দায়িত্বও নিতে পারেন।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, রাজনীতির মাঠে দিন দিন সংস্কারের চেয়ে সামনে চলে আসছে জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গটি। সেখানে দেশের বড় দুই দল বিএনপি, জামাতের গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে ভাবনা কি?

বিএনপি নেতা আবদুস সালাম বলেন, ‘কোনো কিছুতেই বেশি সময় নেবে এমন প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। যেহেতু জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক ষড়যন্ত্র আমরা ফেস করে আসছি।ছাত্ররা অবশ্যই প্রস্তাব করতে পারে। তবে সেই প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমত্যের ভিত্তি ছাড়া কোনো কিছু করা যাবে না। তবে আমি বুঝতে পারি না জাতীয় নির্বাচন যদি হয় আর জনগণ যদি একটা ম্যানডেট দেয় তাহলে সেখানে আমাদের জনগণের ম্যানডেট নিতে আমাদের সমস্যা কোথায়?’

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘গণপরিষদ গঠন করা হলে সেখানে রাজনৈতিক ঐকমত্য লাগবে। রাজনৈতিক ঐকমত্য ব্যতীত গণপরিষদ গঠনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হবে না।’

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদের মতে, গণপরিষদ বা জাতীয় নির্বাচন যেকোনো প্রক্রিয়ায় সব দল মতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে এক হয়ে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘যে নির্বাচনটা হবে সেটা গণপরিষদ নির্বাচন হিসেবে হতে পারে। সেটার হবার পর সংবিধানটা অ্যাপ্রুভ করার পরে এই পরিষদ আরো একটা আইন করে পার্লামেন্ট তৈরি করতে পারে। আর পার্লামেন্টের মাধ্যমে কিন্তু সংবিধান পাশ করতে হবে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা দরকার, সুশাসন দরকার, সাম্য দরকার, ন্যায় বিচার দরকার, এটাকে সামনে রেখে যাই হয় তাই আমরা গ্রহণ করতে চাই।’

এখন দেখার অপেক্ষা, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় জনমুখী সংবিধান পরিবর্তনের প্রশ্নে কি পদক্ষেপ নেয় রাজনৈতিক দলগুলো।

এএম