'ব্যর্থ হয়ে থাকে যদি প্রণয়ের এতো আয়োজন, এসো আগামী মিছিলে, স্লোগানে স্লোগানে হবে কথোপকথন' কিংবা 'এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়'।
এমন অসংখ্য পঙক্তি দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করতেন কবি হেলাল হাফিজ। ষাটের দশকে লেখালেখির সূচনা থেকে জীবদ্দশায় মাত্র তিনটি কবিতার বই প্রকাশ করেই বাংলা কবিতায় অমরত্ব পেয়েছিলেন তিনি।
সেই অমরত্বের স্বাদ আর চরম একাকিত্ব নিয়ে অনন্ত কবিতালোকে পাড়ি জমিয়েছেন প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ। আজ (শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত সুপার হোমের বাথরুমে পড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয় হেলাল হাফিজের। কর্তৃপক্ষ তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হেলাল হাফিজ দীর্ঘদিন ধরে গ্লুকোমায় আক্রান্ত। পাশাপাশি কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস ও স্নায়ু জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। কবির মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ঢল নামে তার পাঠক ও অনুরাগীদের। শেষ সময় কবির পাশে থাকা মানুষেরা জানালেন, তীব্র একাকিত্বে ভুগছিলেন তিনি।
কবি ও সম্পাদক ইসমাত শিল্পী বলেন, ‘তিনি অসুস্থ ছিল অনেকদিন ধরে। আমাদের সাথে সুপার হোমের কর্তৃপক্ষ অনেকদিন ধরে যোগাযোগ করছিল।’
কবি ও সাহিত্যিক শিমুল সালাহ্উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে তার লেখা তরুণরা ব্যবহার করেছে।’
মিছে মায়ার এই নশ্বর পৃথিবীতে নিজের বেঁচে থাকার আশা ফুরালেও এ জাতিকে একতাবদ্ধ থাকার বার্তা দিয়েছেন কবি।
কবি ও গবেষক ইমরান মাহফুজ বলেন, ‘আমি যখন তার সাথে ৬ অক্টোবর কথা বলেছি তিনি নিজেই বলেছেন তার জীবন আর দীর্ঘ হোক তিনি নিজেই চান না আর। কারণ আসলে একাকিত্ব জীবন একই সাথে এমন পরিস্থিতিতে এই জীবন তিনি আর উপভোগ করছিলেন না।’
হেলাল হাফিজের প্রথম জানাজা শনিবার সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে, দ্বিতীয় জানাজা ১১ টায় বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর নেত্রকোণায় আরেক দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে কবি হেলাল হাফিজকে।
১৯৮৬ সালে প্রথম কবিতা 'যে জ্বলে আগুন জ্বলে' প্রকাশের পর জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে আসেন কবি। ২০১৩ সালে লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। তার আগে খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা পেয়েছেন কবি হেলাল হাফিজ।