নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রথমে সংস্কার কমিশন পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর তিন মাসের ধারাবাহিক বৈঠক শেষে কিছু বিষয়ে একমত হতে পারলেও মৌলিক সংস্কার ইস্যুতে অধিকাংশ দলের মতানৈক্য স্পষ্ট।
তাই ‘জুলাই সনদ’ তৈরিতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় দফার আলোচনার সূচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখে ঘুরেফিরে উঠে আসে নির্বাচন প্রসঙ্গ। ক্ষমতার ‘কম ভাগিদার’ অনেক দলকেই জোর দিতে দেখা যায় নির্বাচনমুখী সংস্কার ঘিরে। তবে সংস্কারেও প্রাধান্য দিয়েছে কোনো কোনো দল।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে অধিকাংশ দল তাদের মত প্রকাশ করেছে। সরকারে উচিত হবে এটাকে বিবেচনার মধ্যে নেয়া।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ডিসেম্বরের থেকে যদি অন্যথা কোনোকিছু হয়, কোনো কারণে পেছায়, তাহলে সেটা সরকারকেই ব্যাখ্যা করতে হবে যে, বাড়তি সময় তাদের কেন লাগবে?’
এবি পার্টি সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের ভেতরে যে তারিখটাই হোক, সেটা আলোচনাসাপেক্ষে সমন্বয় করে সবার সঙ্গে পরামর্শ এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা দিন-তারিখে আসা সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে অবস্থা আছে, নির্বাচনের পরিবেশ নেই।’
বৈঠক শেষে প্রতিক্রিয়া জানাতে এসে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ইসির উপর অনাস্থা প্রকাশ করে জানান, জুলাই সনদের আগে কোনোভাবেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দ্রুত যেন জুলাই ঘোষণাপত্রটি জারি করা হয়, সে বিষয়ে আমরা জোর আহ্বান জানিয়েছি। জুলাই সনদ কার্যকর হওয়ার আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা ঠিক হবে না। জুলাই সনদ ঘোষণার আগেই যদি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়, তাহলে সংস্কার প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।’
নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, জুলাইয়ে মধ্যে সব সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঠিক করে রোডম্যাপ দিলে সংকট কেটে যাবেও বলেও জানান তিনি।
মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জুন ও মে আবহাওয়াগতভাবেই নির্বাচনের জন্য উপযোগী নয়। তাহলে মে-জুন বাদ দিলে উনার যে কমিটমেন্ট আছে, তার যে টাইমলাইন সেটা হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল। এর মাঝে একটি রোজা আছে। আমরা বলেছি, এর ভেতরেই আপনি একটা তারিখ ঘোষণা করবেন।’
নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অবস্থান আবারো পুনর্ব্যক্ত করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সংস্কার নিয়ে কমিশন আন্তরিক হলেও যথেষ্ট সময়ক্ষেপণ করেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা জানান, সংবিধান ছাড়া বাকি সব সংস্কার এক মাসে করা সম্ভব। ডিসেম্বরেই নির্বাচনের দাবি করেন তিনি।
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের ভেতরে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। এর আগেই জরুরিভিত্তিতে যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নির্বাচনমুখী; সে সংস্কারগুলোকে চিহ্নিত করে আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেগুলো বাস্তবায়ন করি। এমন কোনো সংস্কার নেই, যেগুলো এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।’
ঐকমত্য কমিশনের অংশ নেয়া সব রাজনৈতিক দলগুলোই মনে করছে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে সব রাজনৈতিক সংকট কেটে যাবে।





