জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির পেছনে বড় কারণ ছিল খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি। জুলাইয়ে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়ায় গত এক যুগে সর্বোচ্চ। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার উঠে দাঁড়ায় ১৩ বছরে শীর্ষে। আর সবশেষ নভেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১১ শতাংশের বেশি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ বৈশ্বিক ইস্যুগুলোকে মূল্যস্ফীতির জন্য বারবার দায়ী করা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মূল্যস্ফীতিতে আমদানিনির্ভর পণ্যের অবদান কমে গত সেপ্টেম্বর শেষে ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যেখানে গত জুন শেষে মূল্যস্ফীতিতে এ ধরনের পণ্যের অবদান ছিল ৩৯ শতাংশ। একই সময়ে মূল্যস্ফীতিতে স্থানীয় পণ্যের অবদান গত জুনের ৬১ শতাংশ থেকে বেড়ে সেপ্টেম্বর শেষে ৭৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে বিগত সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে জানান বিশ্লেষকরা।
ফলে ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেয়া আর মূল্যবৃদ্ধিতে সিন্ডিকেটের কবলে চাপে পড়তে হয়েছে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষকে। এতে তেল ও চিনির মত আমদানি করা পণ্যের দাম কয়েকশ' শতাংশ বাড়তে দেখা গেছে। মঙ্গলবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থার গড়ে তোলার তাগিদ দেন বক্তারা।
এসময় গত ১৫ বছরে উন্নয়নের কথা বড় করে দেখাতে যেয়ে বাজার নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, 'ফুড বাস্কেট দেখছি, সেটা কিন্তু একদম নোটিশঅ্যাবল পরিবর্তন আমরা দেখছি। ধীরে ধীরে দাম কমছে। কিন্তু সেটার রিফ্লেকশন আমরা রিপোর্টিংয়েও দেখছি না এবং যারা কমেন্ট্রি করে তারা পুরো জিনিসটা জেনারেলাইজেশন করছে। আমরা যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই দ্রব্যমূল্যের দাম, আমরা বলছি যে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছিল, আমরা আপনাদের সাথে সমব্যথী, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে এই কাজগুলো করছি।'
অন্যদিকে সম্প্রতি তেলের দাম না বাড়ালে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি হত বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেন, 'এটা আমরা বাস্তবতা থেকে মেনে নিয়ে বাড়িয়েছি। কারণ আমরা যদি এটা না বাড়াতাম তাহলে সরবরাহে একটা বড় ঘাটতি তৈরি হতো। সামনে রমজান আসছে। আমি রমজানের জন্য আপনাদের সুখবর দিতে চাই। আমি আশা করি আমাদের রমজানে প্রয়োজনীয় যেসব দ্রব্য, বাজার স্থিতিশীল থেকে যেন নিম্নগামী থাকে।'
সেই সাথে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে টিসিব প্রকল্পে ১১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কথা জানান তিনি।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, 'বাংলাদেশে টিসিবির ১৬টা অফিস আছে। ড্রাইভার, দাড়োয়ানসহ এই ১৬টি অফিসে সর্বসাকুল্যে কর্মচারী কর্মকর্তা মিলে মাত্র ১৪২ জন। যার বাজেট সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা, হাস্যকর। এই যে বলছি যে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে।'
এসময় আগামী রমজানে ও পরবর্তীতে বাজার স্বাভাবিক রাখতে প্রতিযোগিতা কমিশন দ্রুত কাজ শুরু করবে বলে জানান তিনি।