এক সময় মেঘনাকে বলা হতো চাঁদপুরের দুঃখ। এই মেঘনার করাল গ্রাসে বিলীন হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ভিটে মাটি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়েছেন হাজারো মানুষ। স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙনরোধে তৈরি করা হয়েছে শহররক্ষা বাঁধ। তবে, ভাঙনের মুখে তা রয়ে গেছে নীরব দর্শক হয়ে।
শহরের পুরানবাজার হরিসভা রোড এলাকার মেঘনা পাড়ের বাসিন্দা কুলসুমা বেগম। ৩০ বছর আগে মেঘনা নদী থেকে নিরাপদ দূরত্বে গড়েছিলেন বসতি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে নদী আজ বাড়ির আঙিনায় এসে পৌঁছেছে। তবে শহররক্ষা বাঁধ সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় স্বপ্ন দেখছেন টিকে থাকার। শহররক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় তার মতো আশায় বুক বাঁধছেন নদী পাড়ের হাজারো বাসিন্দা।
ভাঙনরোধে ১৯৭২ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁদপুরের নতুনবাজার এলাকায় ১৭শ' ৩০ মিটার শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৯-২০১০ সালে আরো ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরান বাজার এলাকার ১৬শ' ৩০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকেই বদলাতে থাকে ভাঙনের চিত্র। তবে দীর্ঘ দিন সংস্কার কাজ না হওয়ায় প্রায় প্রতি বর্ষায় ভাঙন দেখা দিত বাঁধে। বিশেষ করে ২০১৯ সাল থেকে বাড়তে থাকে ভাঙনের তীব্রতা। তবে বর্তমানে, বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে জনমনে, সংস্কার কাজের গুণমান নিশ্চিত করার দাবি তাদের।
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সচিব আ. মোতালেব শেখ টুটুল বলেন, ‘কাজটা যেন মান সম্মত এবং টেকসই হয়। আর কাজ যদি ভালোভাবে শেষ হয় তাহলে আমাদের শহরটা রক্ষা পাবার পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যে গতি ফিরে আসবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বর্তমানে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং এর কাজ চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে পাথরের তৈরি ব্লক ডাম্পিং করা হবে।
চাঁদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘শতভাগ গুণগত মান নিশ্চিত করে আমরা কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের জন্য আমাদের ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব টাস্ক ফোর্স আছে। তারা ফিজিক্যালি ও ভিডিও মাধ্যমে তদারকি করছে।’
চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্পে ১৯ টি প্যাকেজে কাজ করছে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছর মে মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের জুন মাসে।