সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। এছাড়াও ঝাউ বন, লাল কাকড়াসহ এখানে রয়েছে মোহনীয় দর্শনীয় স্থান। সাগরের ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার গভীরে আছে চর বিজয় বা ভিক্টোরিয়া আইল্যান্ড। প্রকৃতির টানে প্রতিনিয়ত অসংখ্য পর্যটকের সমাগম ঘটে কুয়াকাটায়।
তবে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটি অনবরত ভাঙনের শিকার হচ্ছে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কুয়াকাটাকে রক্ষাকারী বেড়িবাঁধ। সামনের বর্ষায় বাঁধের দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ধসে যাওয়ার শঙ্কায় স্থানীয় ও পর্যটকরা।
পর্যটকদের একজন বলেন, ‘কুয়াকাটায় যে বেড়িবাঁধ রয়েছে সেগুলো অতিরিক্ত পানির চাপের কারণে ফাটল ধরেছে।’
স্থানীয়দের একজন বলেন, ‘যে গর্ত রয়েছে সেগুলো দ্রুত মেরামত করতে হবে।’
আলীপুর থেকে সাবমেরিন ক্যাবল স্টেশন হয়ে লেবুর বন পর্যন্ত বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্য ৩৮.৯ কিলোমিটার। গেল বর্ষায় এ বাঁধটির ৩০ টির বেশি স্থানে গর্ত তৈরি হয়। সেগুলো সময়মত মেরামত না করলে ও সৈকতের ভাঙন অব্যাহত থাকলে পর্যটন ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কা খাত সংশ্লিষ্টদের।
কুয়াকাটা সিকদার রিসোর্টের জি এম মোহাম্মদ আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘ঝড় বৃষ্টিতে আর আমাদের সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি ঢেউয়ের কারণে সমুদ্রের পাড় ভেঙে যায়। যার ফলে আমাদের পর্যটন ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটন খাতকে আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচনা করে। মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলো এক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে। তাই পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রমে গতি ও স্বচ্ছতা আনা জরুরি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মো. সুজাহাঙ্গীর কবির সরকার বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড যে কাজগুলো করছে তাৎক্ষণিক তা যদি সরাসরি স্বচ্ছতার সাথে করতে পারে তাহলে এই বেড়িবাঁধ ভাঙা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।’
জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছরই বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেগুলো মেরামতে উদ্যোগও নেয়া হয়। তবে, যে পরিমাণ ক্ষতি হয় সে অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার।
বরিশালের দক্ষিণাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘বাঁধ উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার। এতে মেরামতের জন্য এতো বরাদ্দ পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তার উপর আমাদের বার্ষিক মেরামতের পরিকল্পনা করে থাকি।’
১৯৬০ সালে কুয়াকাটায় প্রথম বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়। ২০১৭ সালে সিইআইপি প্রজেক্টের অধীনে বেড়িবাঁধের পুনর্নির্মাণ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়। কিন্তু টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় উপকূলের মানুষ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় থাকেন শঙ্কায়।