হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে মিলেমিশে সবাই এক কাতারে। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ। ঐক্যবদ্ধ দেশের সকল রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়। এমন বার্তা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে সর্বদলীয় রাজনৈতিক সভার পর এবার সকল ধর্মীয় সংগঠনের সাথে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক। শুরুতেই তিনি জানান, সব ধর্ম বর্ণ জাত পাত মিলে বাংলাদেশের সবাই একটি পরিবার।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'আমাদের নানা মত, নানা ধর্ম থাকবে, নানা রীতিনীতি থাকবে কিন্তু আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য।'
তিনি জানান, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে বলে যা শোনা যাচ্ছে সেটা থেকে কীভাবে উদ্ধার হওয়া যায় তার জন্যই এই বৈঠক। হামলা নিয়ে যে তথ্য প্রচার হচ্ছে, সেখানে এতো গরমিল কেন? তা খোঁজ নেয়ার তাগিদের কথা জানিয়ে সংখ্যালঘু সমস্যার বিষয়ে অবাধ, সত্য তথ্য কীভাবে সংগ্রহ করা যায় সে বিষয়ে ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শ চান প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, 'সঠিক তথ্য কীভাবে পাবো, সেটা আমাদের জানার। প্রকৃত তথ্য, অনেক সময় সরকারি তথ্যের ওপর ভরসা করে লাভ নেই। কর্তা যা চাই সেভাবে বলে। আসলটা মনখুলে বলতে চায় না। আমরা আসল খবরটা জানতে চাই।'
আজ (বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেন রামকৃষ্ণ মিশনসহ বিভিন্ন মন্দির ও সংগঠনে থাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, ধর্ম উপদেষ্টা আফম খালিদ হাসান, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমদুল্লাহ, বৌদ্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক, খ্রিষ্টান গির্জার পুরোহিত, বায়তুল মোকাররমের খতিব, রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহার ও হেফাজতে ইসলামের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা জানান, বাংলাদেশে কারও মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। যারা বিভেদ তৈরি করছে, তারাই ভারতে বসে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া বলেন, 'আমাদের চার ধর্মের মধ্যে যেন ঐক্যবদ্ধ থাকে, এটা যেন কখনোই বিনষ্ট না হয়। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই।'
এসময় বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা জানান, ভারতীয় গণমাধ্যমে অনেক উসকানির পরও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ।
ফাদার আলবার্ট রোজারিও বলেন, 'ছোটখাট মিডিয়াতে অনেক উসকানিমূলক কথা বলা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমরা যে আসলেই সম্প্রীতির মানুষ, আমরা অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি।'
হেফাজত নেতারা জানান, পরাজিত শক্তি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ পুরো বাংলাদেশ। আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডের পরও মুসলমানরাও অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি জানান, যারা ফাটল দেখাতে চাইছেন, তাদের অপপ্রচারে পা দেয়া যাবে না।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, 'এ দেশের ধর্মীয় নেতৃত্ব, তারা তাদের জায়গা থেকে অত্যন্ত দায়িত্বশীল। এর কারণেই কিন্তু আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডের পরও সারাদেশের মুসলমানরা অত্যন্ত ধৈর্য্য এবং সংযমের পরিচয় দিয়েছেন।'
সবার শেষে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ভারতের অপতথ্য দুই দেশের জন্য হুমকি জানিয়ে তিনি বলেছেন, ভারতকে আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগের গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, 'ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের মিডিয়ার যে ভূমিকা এটা আমরা বারবার যখনই আমাদের কথা বলার সুযোগ হয়েছে আমরা তুলেছি যে আপনারা আপনাদের মিডিয়ার এ ভূমিকাকে আপনাদের কার্টেইল করতে হবে। এটা আপনাদের দেখতে হবে যে এভাবে এই কর্ডিনেটেড ক্যাম্পেইন যেটা আপনারা চালাচ্ছেন অপতথ্য, এটা আসলে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য হুমকিস্বরূপ।'
বাংলাদেশে ভালো আছেন, এমন কথা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি সম্মেলন করার পরামর্শ দিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেয়া বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা।