প্রকৃতির পালাবদলে এখন প্রভাতে শিশির ভেজা ঘাস আর সামান্য কুয়াশার আবরণ জানান দিচ্ছে শীতের আগমন। তাই আবারও শীত মৌসুমে শুরু হতে না হতেই গাছ তোলা, হাঁড়ি প্রস্তুত, রস জ্বালানোর চুলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন যশোরের গাছিরা। আর কয়েকদিন পরই রস সংগ্রহ করে মেঠো পথ ধরে নিরন্তর ছুটে চলবেন তারা।
একজন গাছি বলেন, 'আমরা গাছ তুলবো, চাষবো, ভাড় আনবো, চুলা বানাবো। তারপর এক দেড় মাস পর রস পাবো।'
যশোরের বানিয়ালি গ্রামের আবুল কাশেম। গতবছর ২৮টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় পাটালি বিক্রি করে লাভ করেছিলেন ৩০ হাজার টাকা। এছরও সমপরিমাণে খেজুর গাছ তুলছেন তিনি।
আবুল কাশেম বলেন, '৪০ বছর আগে থেকে আমি গাছ কাটি। এই করেই আমার চলে।'
যশোরের গুড় শুধু দেশজুড়ে সমাদৃতই নয়, পাল্টে যাচ্ছে জেলার আর্থনীতিও। গেল পাঁচ বছরে এই জেলায় উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ টনের বেশি রস ও গুড়। যাতে বাণিজ্য হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকার বেশি। চলতি বছরেও জেলায় তিন লাখ ৪০ হাজার টন গুড় ও ৪৯ হাজার ৫০০ লিটার রস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্যে ৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। গুড় পাটালির নির্ভেজাল স্বাদ ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে নতুন করে খেজুর গাছ রোপণের পাশাপাশি গাছিদের প্রশিক্ষণ, উপকরণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া কথা বলছেন কর্মকর্তার।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক প্রতাপ মন্ডল বলেন, 'আমাদের এই খেজুরের গুড়ের চাহিদা সারাদেশেই রয়েছে। এক কোটি খেজুরের চারা আমরা রোপণ করেছি। এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এক ব্যাচ ট্রেনিংয়ের জন্য আমাদের শিডিউল হয়েছে।'
যশোর জেলায় ৬৬৫ হেক্টর জমিতে তিন লাখ চার হাজার খেজুর গাছ আছে। আর গাছি রয়েছে পাঁচ হাজার ১২৫ জন।