দুটি মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে পরিবারের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশের পর আজ (বুধবার, ১৩ নভেম্বর) সকালে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দুটি মরদেহ উত্তোলন করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আজ (বুধবার, ১৩ নভেম্বর) সকাল টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর কালীবাড়ি কবরস্থান থেকে নাজমুল ইসলাম রাজুর মরদেহ উত্তোলন করে সিআইডি। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. নাজমুস ছালেহীনের উপস্থিতিতে এ মরদেহ উত্তোলন করা হয়। সে সময় সিআইডি, থানা পুলিশের সদস্য ও নিহতের ছোট ভাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে নাজমুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় তার ছোট ভাই রেজাউল ইসলাম বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২৫ আগস্ট থানায় করা সেই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৩০০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক শহীদুর রহমান জানান, ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ দাফন করা হয়েছিল। তদন্তের স্বার্থে আদালতে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন এবং ময়নাতদন্তের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা করা হয়। পরে লাশ উত্তোলনের জন্য ২৩ অক্টোবর আদালত আদেশ দেন।
নাজমুল ইসলাম রাজু (৩৯) ময়মনসিংহ নগরের সেহরা মুন্সিবাড়ি এলাকা মৃত নিলু মিয়ার বড় ছেলে। তার স্বজনেরা জানান, রাজধানীর উত্তরা-আজমপুর এলাকায় দরজির কাজ করতেন নাজমুল ইসলাম রাজু।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আনন্দ মিছিলে যোগ দেয় নাজমুল। পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উত্তরা পূর্ব থানার সামনে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ- কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে স্বজনেরা রাতে লাশ নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নগরীর কালীবাড়ি কবরস্থানে তাঁকে দাফন করেন।
অপরদিকে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ৪ আগস্ট রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের সামনে গুলিবিদ্ধ হয় ময়মনসিংহ নগরের পুরোহিতপাড়া এলাকার জামিল হোসেন ও সামিরা জাহান দম্পতির ছেলে আবদুল্লাহ আল মাহিন। পরে তাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত সাড়ে নয়টার দিকে মারা যায় কিশোর মাহিন।
৫ আগস্ট সকালে মাহিনকে সমাহিত করা হয় ময়মনসিংহ নগরীর ভাটিকাশর কবরস্থানে। আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আল ইমরানের উপস্থিতিতে কবর থেকে মাহিনের মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
মাহিনের স্বজনরা জানায়, উত্তরা দিয়াবাড়ি মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে মাহিন ভর্তি হয় ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এনআইইটি)। একজন হেলমেটধারীর গুলিতে নিহত হয় কিশোর মাহিন।
এ ঘটনায় গত ২১ আগস্ট বাবা জামিল হোসেন বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ৬০০ জনকে আসামী করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মরদেহ দুটি উত্তোলনের পর সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়েছে।