১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর রাতে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় গোর্কির তাণ্ডবে লণ্ড-ভণ্ড হয় ভোলার বিস্তীর্ণ জনপদ। একের পর এক লোকালয় মাটির সাথে মিশে যায়। তীব্র জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে যায় হাজার-হাজার মানুষ, যাদের অনেকেরই আর খোঁজ মেলেনি।
স্বজন হারা মানুষ ভুলতে পারেনি প্রকৃতির সেই তাণ্ডব। সেদিন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা, চর নিজাম, ঢালচর, কুকরি-মুকরিসহ গোটা জেলা। বেড়িবাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় গাছে উঠে প্রাণ বাঁচায় অনেকে।
পানিতে ভেসে যায় ঘর-বাড়ি, গবাদিপশু, ফসল। প্রাণ হারায় জেলার অন্তত পাঁচ লাখ। ঘটনার ৫৪ বছর পার হলেও জেলার বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরায় এখনো তৈরি হয়নি স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। উপজেলার ৭৮ কিলোমিটার বাঁধের মাত্র ২ কিলোমিটার টেকসই সিসিব্লকে মোড়ানো। বাকি ৭৬ কিলোমিটার বাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় রিমালেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপজেলার ১৬৫ মিটার বেড়িবাঁধ। প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানিতে ভাসছে ৫ ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম।
ভোলা চরফ্যাশনের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির সহকারী পরিচালক মেছপা-উর-রশীদ বলেন, ‘ চরগুলোতে আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। ’
জেলা প্রশাসক বলছেন, মনপুরা উপজেলা রক্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, জিও ব্যাগ ও টিউব ডাম্পিং, সুইচ গেট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, ‘এ ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এরিয়া জুড়ে প্রকল্প নেয়া হয়েছে এবং সেই প্রকল্প অনুসারে আমরা চারদিক দিয়ে বাঁধ দেবার কাজ করে যাচ্ছি। এটি ২০২৬ সালে শেষ হবার কথা থাকলেও ইতোমধ্যে আমরা ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি।’
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় পুরো বাঁধ টেকসই করা সম্ভব হচ্ছে না। অগ্রাধিকার ও ঝুঁকি বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে সিসি ব্লক দ্বারা বাঁধ মেরামত করা হবে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়কের মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘অবশিষ্ট যে বাঁধগুলো রয়েছে সেগুলো কিন্তু আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রকল্পের মাধ্যমে গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা সিসি ব্লক দিয়ে মুড়িয়ে দেবো। যার মাধ্যমে আশা করা যাচ্ছে, আমাদের বাঁধ আর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকবে না।’
ভোলায় ৩৩৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থাকলেও স্থায়ী মাত্র ৪৭ কিলোমিটার।