সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শ্রীমন্তকাটি খেয়াঘাটের নৌকার বহর গোছাতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা কপোতাক্ষ নদ পাড়ের জেলেদের।
কেউ নৌকায় তুলছেন জাল, কেউ সাজাচ্ছেন বাঁশ, দড়িসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। দুবলাসহ আশপাশের চরে ৫ মাসের জন্য অস্থায়ী আবাস গড়ে গভীর সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছেন তারা।
পাইকগাছার মাহমুদকাটি জেলে পাড়ার বাসিন্দা রবিন বিশ্বাস। সাগরে মাছ শিকার পূর্বপুরুষের পেশা। মহাজনের কাছ থেকে উচ্চসুদে টাকা ধার নিয়ে দুই ভাই মাছ শিকারে দুবলার চরে যাবেন। তাদের বিদায় দিতে চলছে পরিবারের প্রস্তুতি।
রবিন বলেন, ‘সাগরের ভিতর গিয়ে আমরা অনেক সময় ঝড়ে মধ্যে পড়ি সেখানে লড়াই করে বেঁচে থাকি।’
তাদের মতোই সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটের বিভিন্ন নদী পাড়ের পল্লি থেকে অর্ধলক্ষাধিক জেলে দুবলার চরে মাছ শিকার ও শুঁটকি তৈরির কাজে যাচ্ছেন। অন্যান্য বছরের মতো এবারও দস্যু আতঙ্ক আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা নিয়েই যাত্রা করতে হচ্ছে তাদের।
জেলেদের একজন বলেন, ‘আল্লাহর উপর ভরসা করেই এই নৌকা সাগরে ভাসাতে হয়।’
কপোতাক্ষ নদের এ জেলেপাড়াগুলো থেকে প্রতিবছর অন্তত ১০ হাজার জেলে সুন্দরবনের গহীনে দুবলার চরে মাছ শিকারের জন্য যান। মাছ শিকারের পর চরেই মাছ শুঁটকি করে বিক্রি করেন তারা। এর জন্য তাদের যে নৌকা প্রস্তুত করতে হয় তাতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। যেগুলো তারা নিচ্ছেন মহাজনের কাছ থেকে। উচ্চ সুদে নেয়া এ ঋণ শোধ করতেই তাদের সময়টি পার হয়ে যায়, যে অর্থ আয় করেন সেটিও ব্যয় করতে হয় সুদের টাকা পরিশোধ করতেই।
জেলে বহরদার মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ৫ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়ে থাকেন। ঋণের বিপরীতে জেলেদের প্রতি লাখে সুদ গুনতে হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
জেলেদের একজন বলেন, ‘এক লাখে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি সুদে টাকা নিয়ে মাছ শিকারে যাচ্ছে।’
জেলেদের মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের খাত থেকে বিপুল রাজস্ব আয় করে বন বিভাগ। প্রতি কেজি শুঁটকির জন্য রাজস্ব দিতে হয় ১০ টাকা। গেল অর্থবছরে ৫ হাজার টন মাছের বিপরীতে সাড়ে ৬ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে বনবিভাগ। এবারের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ৭ কোটি টাকা।
বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা পূর্ব সুন্দরবন কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ‘পূর্ব সুন্দরবনের রাজস্বের আয় হয় দুবলার চরের জেলেদের শুঁটকি থেকে।’
তবে বনদস্যুদের হামলা ও আক্রমণ থেকে জেলেদের রক্ষায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বনবিভাগ। তবে এসব জেলেদের কাঠের নৌযানে জিপিএসসহ জীবনরক্ষা সামগ্রী থাকে না।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে কাজ করা এ মানুষগুলোর জীবনের নিরাপত্তায় কিছুটা হলেও ব্যবস্থা নেবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা জেলে পরিবারগুলোর।