বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ, এপ্রিল, মে এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। কখনো তা গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় হয়ে উপকূলে আঘাত হানে। এতে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতিও হয়ে থাকে। সবশেষ চলতি বছরের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় 'রেমাল' আঘাত হানে উপকূলে। এ সময় অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি করে। লোকালয় পানি ঢুকে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হন উপকূলবাসী। সে কারণে ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনলেই আতঙ্কিত হন তারা।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘কোথায় যাবো? কী করবো? গরু- ছাগল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি।’
আরেকজন বলেন, ‘৫ থেকে ৭ ফুট বেশি পানি হলে আমাদের আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়া থাকার উপায় নেই।’
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে বরিশাল বিভাগ সহ উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরমধ্যে শুধু বরিশাল বিভাগেই ৬০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয় বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমাদের কর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যেসব দুর্বল জায়গা রয়েছে সেখানে জিও ব্যাগ দিয়ে তা শক্তিশালী করা।’
বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী জেলাগুলোতে রয়েছে অনেক নদ–নদী। ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাগর ফুঁসে ওঠে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়তি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে বেড়িবাঁধ ও পোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লোকালয়ে পানি ঢুকে পরলে প্রাণ ও সম্পদহানির আশঙ্কা থাকে। জীবন বাঁচাতে তাই সরকারি নির্দেশনা মেনে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার জনগণকে অবশ্যই সময়মতো আশ্রয়কেন্দ্রে যাবার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘আগাম সতর্কতা মেনে চললে এইসব দুর্যোগ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।’
সারাদেশে বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্য ১৬ হাজার ৬৩১ কিলোমিটার। পোল্ডার বা উপকূলীয় বাঁধ আছে ৫ হাজার ৮১৬ কিলোমিটার। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগেই রয়েছে ৩ হাজার ২৬৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ভোলার মনপুরা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার বাঁধের এখনও সংস্কার হয়নি।