গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। পলাতক শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয় ভারতের মোদি সরকার। দায়িত্ব নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার।
এই সরকারের শুরু থেকেই আলোচনায় গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে কিনা? হলেই বা তার প্রক্রিয়া কী?
অবশেষে শুরু হলো বিচার প্রক্রিয়া। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অর্ধশতাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। মামলার পরবর্তী তারিখ ১৮ নভেম্বর ধার্য করে এই সময়ে তাকে আদালতে হাজির করতে বলা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, 'একটা সরকার কীভাবে দানবীয় সরকার হয়ে নিরস্ত মানুষের উপর গুলি করলো। সেজন্য আমরা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিলাম। আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছে।'
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পরই গণমাধ্যমে সরকারের দুজন উপদেষ্টা জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে বিচারের প্রয়োজনে তাকে আনতে হলে আমরা সেই উদ্যোগ গ্রহণ করবো।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘কোর্ট বলেছে তাকে গ্রেপ্তার করতে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নির্দেশ নিশ্চয় পুলিশের কাছে গিয়েছে আমার কাছে তো আসেনি। তারা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না কারণ তিনি দেশে নেই তখন আমাদের দরকার হবে।’
এবার নতুন প্রশ্ন। কীভাবে ফেরত আনা হবে শেখ হাসিনাকে? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দু'ভাবে ফেরত আনার চেষ্টা করতে পারেন শেখ হাসিনাকে। প্রথমটি নিজ কূটনৈতিক চ্যানেলে আর দ্বিতীয়টি হলো আন্তর্জাতিক সংস্থা বা সংগঠনের সহযোগিতা নিয়ে। তবে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে কিনা সেটা নির্ভর করছে ভারতের সিদ্ধান্তের ওপরই।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, 'ভারত যদি এটাকে অন্যভাবে দেখে আর ভারত যদি না চায় তাহলে আমি যতই প্রসেসের কথা বলি না কেন সেটা কোনোভাবেই অগ্রসর হবে না।'
শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক উল্লেখ করে এই বিশ্লেষক জানান, তাকে ফেরত আনতে গেলে রাজনৈতিক ভাবেই আগাতে হবে সরকারকে। নয়তো দু'দেশের সম্পর্কে বাড়তে পারে অস্বস্তি।
যদিও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দিনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালের বক্তব্য শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর ইঙ্গিত দেয় না। তিনি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার বিষয়ে আমি আগেও বলেছি, নিরাপত্তাজনিত কারণে খুব অল্প সময়ের জন্য তিনি ভারতে এসেছিলেন। এখনও তিনি এখানেই আছেন।’
এমন অবস্থায় কী করবে বাংলাদেশ? আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার যে বন্দি বিনিময় চুক্তি সাক্ষর হয়েছিলো সেই আইনের প্রয়োগই পারে শেখ হাসিনা ফেরত আনতে। শুধু দরকার কূটনৈতিক দূরদর্শিতা।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘এই আইনের মাধ্যমে কূটনৈতিকভাবে অগ্রসর হতে হবে। সে ব্যাপারে ভারতকে জানানো হবো।’
তবে, শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে না পারলেও তার বিচার প্রক্রিয়া থেমে থাকবে না। তার অনুপস্থিতিতেই দোষী সাব্যস্ত হলে আইন অনুযায়ীই দণ্ড পাবেন তিনি। পরে তাকে পাওয়া সাপেক্ষে কার্যকর করা যাবে সাজা। আর তাকে পাওয়া না গেলে তার দেশি বিদেশি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার সুযোগ থাকবে। আর দায়মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে ফেরাও অসম্ভব।
বাংলাদেশ ভারত বন্দি বিনিময় এই চুক্তির সুবিধা ইতোমধ্যেই দু'দেশই পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গি, সাত খুনের আসামি নূর হোসেনকে এই চুক্তির আওতায় ফেরত পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর ভারত পেয়েছিল উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে। তবে শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারত বাংলাদেশ সরকার না দল আওয়ামী লীগকে বিবেচনা করবে, সেটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে সময়ের।