দেশে এখন
0

ইলিশের অভয়ারণ্য রক্ষায় সমুদ্রে সতর্ক পাহারা নৌবাহিনীর

বাঙালির পাত থেকে দিন দিন উধাও হয়ে যাচ্ছে ইলিশ। বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে সুস্বাদু এ মাছ। এবারের মৌসুমে রীতিমতো দাম নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। এতদিন যে অভিযোগ ছিল তারই প্রেক্ষিতে মা ইলিশের অভয়ারণ্য রক্ষায় সমুদ্রে সতর্ক পাহারা শুরু করেছে নৌবাহিনী।

ভরা মৌসুমে দেশের অন্যান্য নদ-নদী, মোহনা এমনকি সাগরেও ধরা পড়েনি কাঙ্ক্ষিত রূপালি ইলিশের। এতে বছরজুড়েই দাম ছিল আকাশছোঁয়া।

ইলিশের ভরা মৌসুমে পাতে ইলিশ থাকবে না, সাধারণ মানুষ নিতে পারবেন না রূপালি ইলিশের স্বাদ তা যেন অবিশ্বাস্য। গত এক দশকে সাধারণ মানুষের আয় বাড়ার তুলনায় জাতীয় মাছ ইলিশের দাম বেড়েছে অন্তত সাত গুণ। এ মৌসুমে কেন ইলিশের দাম বেড়েছে সে উত্তর যেমন খুচরা বিক্রেতারা দিতে পারেন না, তেমনি ভোক্তারাও ইলিশের অতৃপ্তির হতাশায় ডুবে আছেন।

একজন ক্রেতা বলেন, 'ইলিশ কেনা সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। একটু ভালো মাছ পছন্দ হলেই সেটা এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা।'

একজন বিক্রেতা বলেন, 'এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকাতেও মাছ বিক্রি হয়েছে, যে মাছের সাইজ ভালো।'

ইলিশের প্রজন বৃদ্ধি এবং বংশবিস্তার নির্বিঘ্ন করতে চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তবে এ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জেলে ও ব্যবসায়ীদের আছে নানা মত। আবার অনেকেরই অভিযোগ নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নেন প্রতিবেশি দেশের জেলে ও মৎস্য শিকারিরা।

একজন জেলে বলেন, 'যে সময় ডিম ছাড়বে সে সময় বন্ধ দেয়নি। আর এখন মাছের পেটে ডিম নেই এখন বন্ধ দিয়েছে। আর আমাদের বন্ধ রাখার সুযোগে ভারত থেকে এসে মাছ মেরে নিয়ে যায়। সেজন্য আমাদের এখানে মাছ কম, দাম খুব বেশি।'

দেশের বাজারে ইলিশের স্বল্পতা ও দাম বৃদ্ধির কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেশি-বিদেশি জেলেদের মাছ শিকার। তবে এবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে এবার দেশের সমুদ্র ও জলসীমায় এবার কঠোর অবস্থানে আছে নৌ বাহিনী।

সমুদ্রসীমার শূন্য রেখা পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বানৌজা সমুদ্র অভিযান, স্বাধীনতা, অপরাজেয় ও গোমতী। নিরাপত্তা বেষ্টনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে জলসীমানায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আকাশ পথে টহল দিচ্ছে 'মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফট'। পাশাপাশি মা ইলিশ সংরক্ষণে দেশের উপকূল এবং অভ্যন্তরীণ অঞ্চলেও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী।

বানৌজা নিশানের অধিনায়ক কমান্ডার মোমিনুল ইসলাম বলেন, 'ফিশারম্যান এবং ফিশিং এই দু'টিকেই রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় কাজ করে থাকে। স্পেশালি এই সময় আরও বেশি অভিযান পরিচালনা করার জন্য আরও বেশি যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করা থাকে। এই যে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে, আমরা বছরব্যাপী যে অভিযান পরিচালনা করে থাকি তার চেয়ে এই সময়টা আমরা অধিক জোড় দিই যেন ইলিশের প্রবৃদ্ধি আমরা অক্ষুণ্ন রাখতে পারি।'

এদিকে নৌবাহিনী যখন সমুদ্রসীমার মৎস্য সম্পদ রক্ষার কাজ করছে, ঠিক তখনই ২২ দিনের অভিযানে খুলনাঞ্চলে খুব বেশি প্রভাব রাখতে পারছে না মৎস্য বিভাগ। ছোট খাটো অভিযানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান কার্যক্রম।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, '১৩টি মোবাইল কোর্ট করা হয়েছে এবং ৪৬টি অভিযান করা হয়েছে। এই মোবাইল কোর্ট ও অভিযান করে আমাদের এখানে ৭৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে পাঁচজনকে। এর সাথে প্রায় পাঁচ লাখ মিটার কারেন্ট জাল আটক করা হয়েছে।'

চলতি মাসের ১৩ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযানে নৌবাহিনী তিন কোটি ১২ লাখ টাকা মূল্যের প্রায় ছয় লাখ ৩০ হাজার ৫০০ মিটার দীর্ঘ অবৈধ জাল ও বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ আটক করেছে। আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এ অভিযান চলমান থাকবে।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর