দেশে এখন
0

৩০ বছরে এমন বন্যার মুখোমুখি হয়নি নেত্রকোণাবাসী

আকস্মিক বন্যায় ভাসছে নেত্রকোণার চার উপজেলা। হঠাৎ আসা পানিতে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন গ্রাম। নদী তীরবর্তীরা বলছেন, গত ৩০ বছরেও এমন বন্যার মুখোমুখি হননি তারা। যদিও বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে বেশ কিছু এলাকায়। দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারসহ বন্যা দুর্গতদের দুর্ভোগ কমাতে দ্রুতই কাজ শুরু হবে।

যতদূর চোখ যায় বানের পানিতে ভেসেছে গ্রামের পর গ্রাম। বাড়িঘর, ফসলি মাঠ সবকিছুই যেন ভাসছে আকস্মিক বন্যার পানিতে। পানি দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটি সোমেশ্বরী নদী আর কোনটি কংস নদ। সব পানি যেন একত্রে মিশে এক বিশাল জলরাশিতে রূপ নিয়েছে। এমন চিত্র নেত্রকোনার দুর্গাপুর, পূর্বধলা, সদর ও কলমাকান্দা উপজেলার।

গেল কয়েকদিনের বন্যায় পানিবন্দি হয়ে আছে চার উপজেলার অন্তত অর্ধলাখ বাসিন্দা। সময়ের সাথে পানি যতই নিচুতে নামছে, ততই যেন বাড়ছে প্লাবিত এলাকার সংখ্যা।

আশ্বিনের ভাসা পানিতে ভেসেছে কৃষকের স্বপ্ন। ডুবে গেছে এখানকার বাড়িঘর থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়রা বলছেন গত ৩০ বছরেও কংসের এমন ভয়াবহ রূপ দেখেনি তারা। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি।

পূর্বধলা উপজেলায় কংস নদের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে নাটেরকোনা বেড়িবাঁধ। সেখান থেকেই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এ অবস্থায় ভাঙনের হাত থেকে শেষ সম্বলটুকু রক্ষায় বাঁশ কাঠ দিয়ে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় একজন বলেন, 'বাড়িঘর সব ভেঙ্গে গেছে। জমিজামা বেশি নেই আমার। অল্প যা চিল সব এবার বানের পানিতে চলে গেলো। এখন আমি কোথায় যাবো। এলাকার অনেকেরই প্রায় এই অবস্থা।'

স্থানীয়দের অভিযোগ, গেলো কয়েক বছর ধরে বাঁধে মাটি না ফেলায় ভেঙেছে বাঁধ। একাধিকবার এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও মেলেনি কোনো সুরাহা। তাই বাঁধের ভাঙা অংশ দ্রুত মেরামতের তাদের।

একজন কৃষক বলেন, 'এলাকার লোকজন যারা যা আছে তাই নিয়ে এখানে বাঁধার চেষ্টা করছে। সরকারের কাছে আবেদন থাকবে যেন এই রাস্তাটা উঁচু করে দেয়। গেল ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এমন বন্যা দেখিনি আমি।'

এদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি নামতে শুরু করেছে দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো থেকে। তবে নতুন করে পানি ঢুকছে কলমাকান্দা ও সদর উপজেলায়। স্থানীয়রা বলছেন, পানি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে এরই মধ্যে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছ। কমিটির মাধ্যমে মনিটরিং করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বনানী বিশ্বাস বলেন, 'প্রতিটি উপজেলায়ই নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে টিম গঠন করে এবং জেলা প্রশাসন থেকে তিনজনের টিম গঠন করে সবসময় মনিটরিং করছি যেন জনদুর্ভোগ কমানো যায়।'

কৃষি বিভাগ বলছে, কয়েকদিনের বন্যায় জেলার চার উপজেলার প্রায় সাড়ে ২২ হাজারের হেক্টর বেশি চলতি রোপা আমনের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ভেসে গেছে পুকুরে মাছ। এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা না গেলেও শুধু দুর্গাপুরই ১৮ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর