প্রতি বছর বাংলাদেশ জিডিপির ২ শতাংশ করে হারাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে। যা ২০৫০ সাল নাগাদ জিডিপির ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমাতে পারে। এমন অবস্থায় দেশি বিদেশি উৎস থেকে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তাতে রয়েছে বণ্টন বৈষম্য। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলের ৩ গুণ বরাদ্দ পায় উপকূলীয় অঞ্চল।
যেখানে খরা, সুপেয় পানির সংকট ঘনীভূত হচ্ছে কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে। উত্তরের জনপদে ধারাবাহিকভাবে কমছে কৃষি উৎপাদন।
শনিবার রাজধানীর গুলশানে জলবায়ু অর্থায়নে বণ্টন ন্যায্যতা শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে এমন তথ্য জানায় জলবায়ু গবেষণা সংস্থা সিপিআরডি।
সভায় সিপিআরডির লস অ্যান্ড ড্যামেজ গবেষকি ইলমি তাবাসসুম বলেন, ‘সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দক্ষতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, খাদ্য নিরাপত্তা, ঝুঁকি প্রশমন, অবকাঠামোর মতো সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে অবকাঠামো। সবচেয়ে কম বরাদ্দ সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়।’
গবেষণায় উঠে আসে দুই দশকে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ১ হাজার ৩০০ কোটি বরাদ্দ হয় চট্টগ্রাম ও বরিশালে ২৮২টি প্রকল্পে। একই উৎস থেকে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে ১৬৩ টি প্রকল্পে বরাদ্দ হয় ৫১২ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দের মাত্র ১৭ শতাংশ।
এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের জলবায়ু খাতে বরাদ্দ ৩৭ হাজার কোটি টাকার মাত্র ৭৬৯ কো টি বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় পেলেও, বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের ৯ হাজার কোটি টাকা পায় কৃষি মন্ত্রণালয় ও ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পায় স্থানীয় সরকার বিভাগ।
খাদ্য নিরাপত্তা, অবকাঠামো, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ বছর বছর বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি এড়াতে জলবায়ু গবেষণায় বরাদ্দ সমানুপাতে না বাড়ার চিত্র তুলে ধরে সিপিআরডি।
সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, বেশিরভাগ প্রকল্পের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক নেই। জলবায়ু ঝুঁকির কথা বললে প্রথমেই আসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন সাইক্লোন, নদী ভাঙনের বিষয়গুলো। যেখানে আমরা ঝুঁকি কমাতে উদ্যোগী হই। কিন্তু আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বাকি ধাপগুলো চিহ্নিত করতে পিছিয়ে আছি।’
সেমিনারে বক্তারা জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন। পাশাপাশি জলবায়ু ক্ষতি মোকাবেলায় প্রয়োজন ও সম্ভাব্যতা যাচাই করে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকল্প গ্রহণের আহ্বান জানান বক্তারা।