জলবায়ু পরিবর্তনে দুর্যোগে রূপ নিয়েছে বরেন্দ্র শহর; ভারসাম্য রক্ষায় তালগাছ রোপণ

তালগাছ রোপণ
তালগাছ রোপণ | ছবি: এখন টিভি
2

পথ হারিয়েছে ঋতুচক্র। বর্ষার জল গুলিয়েছে শরৎ হেমন্ত আর শীতের ঘর। আকাশ জুড়ে মেঘেদের তর্জন-গর্জনে রীতিমত দুর্যোগে রূপ পেয়েছে খটখটে শুষ্ক বরেন্দ্র শহর। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বজ্রপাতের ঝুঁকি বেড়েছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে। এমন অবস্থায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় জেলার বরেন্দ্র এলাকায় রোপণ করা হচ্ছে এক লাখ তালের গাছ।

ভাদ্র পেরিয়েছে কবেই। আশ্বিনের এখন শেষভাগ। কোথায়, ধূমল আকাশ হবে ময়ূরকণ্ঠী নীল! তা নয়, গোমড়া মুখে চলে যতো তর্জন-গর্জন।

পরিবেশবিদরা বলছেন, অনিয়মিত জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে বাড়ছে প্রাকৃতিক বৈরিতা। খরা ও অতিবৃষ্টির সঙ্গে বাড়ছে অস্বাভাবিক বজ্রপাতের ঘটনা। তাতে ফল-ফসলের ক্ষতির সাথে প্রাণ হারাচ্ছে কৃষক-শ্রমিক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এফ এম আলী হায়দার বলেন, ‘বায়ুমণ্ডলের যে ইলেকট্রন, তালগাছ এ ইলেকট্রন শোষণে প্রচুর ভূমিকা পালন করে। যে এলাকায় প্রচুর তালগাছ আছে সে এলাকায় বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। যার ফলে পরিবেশ রক্ষায় তালগাছের ভূমিকা অনেক বেশি।’

বরেন্দ্র অঞ্চল ভিত্তিক গবেষণা ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্টুডেন্ট স্কয়ার ফাউন্ডেশন’, আইসিডিডিআরবি আর স্থানীয় পত্র-পত্রিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন বলছে, ২০১০ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকার তিন জেলায় বজ্রপাত হয়েছে অন্তত ৫৬৭ বার। তাতে প্রাণ গেছে ৩৯৯ জনের।

আরও পড়ুন:

এ অবস্থায় ধু-ধু বরেন্দ্র অঞ্চলে বজ্রপাতের পরিমাণ কমাতে বন বিভাগ ও পরিবেশ প্রেমীরা বাড়িয়েছেন গাছ লাগানোর পরিমাণ। এর অংশ হিসেবে বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় গোদাগাড়ীতে লাগানো হয়েছে এক লাখ তালগাছের চারা।

তালগাছের চারা লাগানো ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বলেন, ‘দেশের প্রকৃতি, জলবায়ু পরিবর্তন ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য আমরা এ কাজে যোগ দিয়েছি। যেহেতু আমাদের উপকার দেশের উপকার।’

রাজশাহী স্টুডেন্ট স্কয়ার ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সরকার মরিয়ম বলেন, ‘আশ্বিন মাস পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখন পর্যন্ত বর্ষা চলে যাচ্ছে। শীতের মধ্যে বর্ষা ঢুকে গেছে, শীতের স্থায়িত্ব কমে গেছে। কোনোবার অতিবর্ষা হচ্ছে আবার কোনোবার অনাবৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো মলত পুরো এলাকার প্রাণ বৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। এই যে ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে এটার একটা কাউন্টার দিতে পারি আমরা। এর শূল উপায় আমাদের কাছে একটাই সেটা হচ্ছে গাছ লাগানো।’

আরও পড়ুন:

আর প্রাকৃতিক বৈরিতা ঠেকানোর পাশাপাশি কৃষি কাজে উপকারিতায় গাছের পরিচর্যা করছে গ্রামবাসীরাই।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘ধানি জমিগুলোতে অনেক রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ভারী ধাতুগুলো তাল গাছগুলো শোষণ করবে। এটা হচ্ছে তালগাছের উপকারিতা।’

এরইমধ্যে জেলার পানি সঙ্কটে থাকা গ্রামগুলোয় ৫০০-এর বেশি তাল গাছের চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। আর বন বিভাগ বলছে বরেন্দ্র অঞ্চলে উষ্ণায়ন কমাতে প্রকল্প নিয়ে গাছের পরিমাণ বাড়াচ্ছেন তারা।

রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো: জাহাঙ্গীর আমল বলেন, ‘রাস্তার ধারে যদি লাগানো হয়, তাহলে এটার বহুমুখী উপকার আছে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে শক্তভাবে মাটিকে ধরে রাখে, জায়গা বেশি নেয় না। আমরা আশা করছি যেসব তালের চারা রোপণ করা হয়েছে ভবিষ্যতে হয়তো এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের অব্যাহত থাকবে।’

এছাড়া বন বিভাগ জানিয়েছে সামাজিক বনায়নের আওতায় চরাঞ্চলে এক লাখ আর বরেন্দ্র এলাকায় তালবীজ লাগানো হয়েছে পঞ্চাশ হাজারের বেশি।

এসএস