দেশে এখন
0

সংস্কারে গণমানুষের চাওয়াকে প্রাধান্য দেয়ার কথা বলছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ

ছাত্র-জনতার প্রাণ হারানো গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রেখে পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। সংস্কারে গণমানুষের চাওয়াকে প্রাধান্য দেয়ার কথা বলছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ঐকমত্য ভিত্তিক সংস্কারের কথা।

গত ৫ আগস্ট এভাবেই রাজপথ থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতার দখলে নেয় শিক্ষার্থী- জনতা। টানা ৩৬ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, সহস্রাধিক প্রাণের বিনিময়ে পতন ঘটে শেখ হাসিনার শাসনামলের। অভ্যুত্থানের তিন দিন পর নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে নির্বাচন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে দলীয়করণ করা হয় রাষ্ট্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠানে। তাই গণঅভ্যুত্থানের পর শুরুতেই আলোচনায় আসে রাষ্ট্র সংস্কারের ইস্যুটি।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন এবং জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন ও কমিশন প্রধানদের নাম ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের হাতে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা দিয়ে আপনারা দর্শকের গ্যালারিতে চলে যাবেন না।’

এদিকে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৯০ দিনের মধ্যে কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন পেশ করবে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা যেন ফিরে না আসে সংস্কারের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম।

সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম সংস্কার ফ্যাসিবাদী সিস্টেম বিলুপ্ত করা। ফ্যাসিবাদী সিস্টেম যে-সব সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে তা সংস্কার করা।’

অপরদিকে সাধারণত শিক্ষার্থী যারা এই গণঅভ্যুত্থানের নিউক্লিয়াস তারা গঠিত কমিশন এবং সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে আশাবাদী। যদিও সংস্কার প্রক্রিয়ার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার কথাও জানান তারা।

শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, রাষ্ট্রের যে-সব সংস্থা আছে সেগুলোর সংস্কার করা।

আরেকজন বলেন, ‘যে কমিশন গঠন হয়েছে তাদের কাজ হবে আমাদের কাছে সত্য তুলে ধরা।’

সাধারণ মানুষ যারা গত একযুগের বেশি সময় ধরে নির্যাতিত, হারিয়েছিলেন বাক স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার তারাও স্বপ্ন দেখছেন নতুন এক বাংলাদেশের।

সাধারণ নাগরিকদের একজন বলেন, ‘গত সরকার যেভাবে দেশ চালিয়েছে সেভাবে যেন কেউ আর দেশ না চালায়।’

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট জনআকাঙ্খার সঠিক বাস্তবায়ন করতে হলে কমিশনগুলোতে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সাধারণ মানুষসহ সব স্তরের মতের প্রতিফলন ঘটাতে হবে বলে মনে করেন এই রাজনীতি বিশ্লেষক।

রাজনীতি বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সাধারণ মানুষসহ সব স্তরের মানুষের ভিত্তিতে কমিশন গঠন করা। কমিশন কাজের সুবিধার্থে গণশুনানি করতে পারে সর্বসাধারণের জন্য। ’

গণআকাঙ্খার বিপরীতে কমিশন নিয়ে শঙ্কার কথাও জানান তিনি। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে সুচিন্তিত ও বাস্তবসম্মত সুপারিশ করতে না পারলে আবারও কর্তৃত্ববাদ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে মত তার।

তবে কমিশনের সুপারিশ কতটুকু এবং কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সে ব্যাপারে এখনো কোন দিকনির্দেশনা কোন তরফ থেকেই জানানো হয়নি।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর