ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের তৈরি ২০২১ এর বিতর্কিত শিক্ষাক্রম বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। সিদ্ধান্ত হয় ২০১২ সালের কারিকুলামে ফেরার। এরপর সেই কারিকুলামের ৪৪১টি বই পরিমার্জন, টেন্ডার প্রক্রিয়া করতে ঘনিয়ে আসে ডিসেম্বর। এভাবে নানান চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ বই পাঠানোর ছাড়পত্র হয়েছে।
বিগত সময় নিম্নমানের পাঠ্যবইয়ে সারাদেশ সয়লাব থাকলেও এবার বইয়ের কাগজ এবং ছাপার মান নিশ্চিতে প্রেসে প্রেসে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের তদারকি চোখে পড়ে এখন টিভি'র। নিম্নমানের বই ছাপানোয় এরইমধ্যে শুধু প্রাথমিকেরই লক্ষাধিক বই বাতিল করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর জন্য ৪০ কোটির বেশি বই বিতরণের লক্ষ্য সরকারের। যেখানে সরকারের ব্যয় দুই হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এনসিটিবি বলছে, বছরের প্রথম দিনই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বই হাতে পাবে। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পাবে বাংলা, ইংরেজি, ও গণিত বই। এসব শ্রেণির আরও পাঁচটি করে বই ১০ জানুয়ারির মধ্যে, বাকি বই ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীর হাতে যাবে।
এনসিটিবি'র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ. কে. এম রিয়াজুল হাসান বলেন, 'দশম শ্রেণি যেহেতু সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জানুয়ারির ৫ তারিখের মধ্যে দশম শ্রেণির সবল বই দেয়ার পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। বইয়ের মান খারাপ করলে তার কোনো ক্ষমা হবে না। সে শাস্তি পাবেই। এবং পূর্বে যাই কিছু হয়ে থাকুক, বার শাস্তি তাকে বোগ করতে হবে। এরই মধ্যে আমরা প্রায় লক্ষাধিক খারাপ বই আমরা বাদিল করে দিয়েছি।'
তবে প্রেস মালিকরা বলছে, জানুয়ারি নয়, সব বই মাঠে পৌঁছাবে ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের আন্তরিকতা চেষ্টা সব থাকার পরও র- ম্যটেরিয়ালসের সংকটের কারণে কিছুটা দেরি হয়ে যাবে। এনসিটিবি যে আশাবাদ ব্যক্ত করছে, জানুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে সব বই পাওয়া সম্ভব হবে না, তবে এটা ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে ধরে নিতে পারি যে এর মধ্যে সব বই যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।'
এ জন্য যেন শিখন ঘাটতি তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান শিক্ষাবিদদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম বলেন, 'জানুয়ারির ভেতরে প্রতিটি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাতে হবে। নানা রকম শারীরিক আমাদের শিক্ষাক্রমে করার সুযোগ আছে। এগুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীদের রাখতে হবে। সে অনুযায়ী একটা নির্দেশনা দিলে যেন ১ জানুয়ারি থেকে আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা স্কুল কেন্দ্রীক কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে।'
কোনো প্রিন্টিং প্রেস নিম্নমানের বই ছাপালে এবং নির্ধারিত সময়ে বই দিতে ব্যর্থ হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের।