বিএনপির ডাকা কর্মসূচির সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ। এরপর রিমান্ডের নামে নির্যাতন করে। হাত, পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পুলিশ তাকে পিটিয়েছিল।
নিয়াজ বলেন, 'ফ্যানের সাথে বা অন্য কিছুর সাথে ঝুলে পিটিয়েছে। প্রথমে কিছুক্ষণ পিটিয়েছে তারপর আবার এসে পিটিয়েছে। এভাবেই নিয়মিত পিটাইতো। আমাদের ছেলেপুলে যারাই যখন গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের এক্সপেরিয়েন্সটা এরকমই, আমাদেরও একই রকম। পৈশাচিক নির্যাতন করতো। ওই সরকার মধ্যযুগীয় নির্যাতন করতো আমাদের উপর পুলিশের মাধ্যমে।'
একইভাবে নির্যাতনের শিকার হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক হিমেল। তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ২০টিরও বেশি। আর যুবদল দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনামের মামলার হিসেব জানলে তো চোখ কপালে উঠার অবস্থা। পুলিশ তাকে মামলা দিয়েছে ৩২৬টি।
খন্দকার এনাম বলেন, 'মামলা ছাড়াই তো গ্রেপ্তার করতো। মামলা না থাকলে একটা মামলা দিয়ে দিতো, আরেকটা পেন্ডিং মামলা, না হলে পকেটে নেশাদ্রব্য ঢুকিয়ে দিতো। মিথ্যা মামলা, মামলা দিয়ে হয়রানি করা এগুলো নিত্যদিনের ব্যাপার ছিল। আর রিমান্ডে নির্যাতন ছিল অমানবিক।'
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর পল্টন থানার পুরোটাই পুড়িয়ে দেয় ছাত্র-জনতা। অপরাধ ছিল ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালানো। এরপর দাবি উঠে পুলিশ সংস্কারের। গঠন করা হয় পুলিশ সংস্কার কমিশন।
পুলিশ সংস্কার নিয়ে সাধারণ মানুষ কী ভাবছে? একজন পথচারী বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশের দ্বারা যে ধরনের নির্যাতন চালিয়েছে, আমরা ওইরকম পুলিশ চাই না। আমরা চাই পুলিশ হবে জনগণের আস্থার প্রতীক।'
বরাবরই সকল রাজনৈতিক দল পুলিশকে বিরোধী দল-মত দমনের হাতিয়ার হিসেছে ব্যবহার করে এসেছে। মৃত্যুর মিছিলে টিকিয়ে রেখেছে ক্ষমতা। প্রাণহানি এড়াতে ইউরোপীয় দেশগুলোর নির্ধারিত একটি মানদণ্ড আছে। সেই অনুযায়ী প্রাণঘাতী অস্ত্র পুলিশকে না দেয়ার সুপারিশ করবে পুলিশ সংস্কার কমিশন।
এছাড়া গ্রেপ্তার, রিমান্ডের আসামীর ক্ষেত্রে নির্দেশনা মানতে হবে হাইকোর্টের। পুলিশের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির দায়িত্বে স্বতন্ত্র কমিশনকে সুপারিশ করবে তারা।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন বলেন, '২০০৭ সাল থেকে একটা পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব পেন্ডিং আছে। সেটা সরকার কেন করেনি এটা আমরা বারবার জিজ্ঞেস করেছি। সংসদ তো নেই, এখন কোনো একটা আইন তৈরি করতে গেলে তা করা যাবে না। এখন করা যাবে অধ্যাদেশ। আর প্রাণঘাতী অস্ত্র না দেয়ারও সুপারিশ করা হবে।'
পুলিশ সংস্কার এখন সময়ের দাবি বলছে অপরাধ বিশ্লেষকরা। তবে রাজনৈতিক বলয় থেকে মুক্ত করা না গেলে, সংস্কার সুপারিশ কোনো কাজে আসবে না বলেও জানান তারা।
অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'বড় রাজনৈতিক দলগুলোর এই কমিটমেন্ট কার্যকরী এবং বাস্তবায়নযোগ্য হবে তখনই যখন তারা ক্ষমতায় গেলে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুলিশকে ব্যবহার করবে না। ততদিন পর্যন্ত সংস্কার কমিশন কিংবা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আমরা যে যতই প্রত্যাশা করি না কেন, আদতে খুব একটা বেশি পরিবর্তন যে আমরা দেখতে পাবো- দিন শেষে সেটি প্রত্যাশা করাটাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের জন্য অতিপ্রত্যাশা হয়ে দাঁড়াবে।'
আইন প্রয়োগকারীরা অন্যায় কাজের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেলে অন্যরাও অনুরূপ অসদাচরণে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকবে বলে মনে করে পুলিশ সংস্কার কমিশন।