দেশে এখন
0

বন্যায় হ্যাম রেডিওর কারণে প্রাণে বেঁচেছেন অনেকে

কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই ২০ আগস্ট গভীর রাত থেকে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের আটটি জেলা প্লাবিত হতে শুরু করে। পরদিন দুপুরে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। দেখা দেয় নিরাপদ আশ্রয়, খাবার ও সুপেয় পানির অভাব। তবে এই সময়ে বন্যা কবলিত মানুষের পাশে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় হ্যাম রেডিও। দ্রুত সময়ে ছড়িয়ে দেয়া হয় এর সেবা। এতে উদ্ধার কার্যক্রম তরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণেও বেঁচেছেন অনেকে।

এমনি এক বন্যাকবলিত জেলা ফেনী। ওইদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় থেমে যায় জেলার প্রচলিত সব যোগাযোগ ব্যবস্থা। সারা দেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এই জনপদ। আটকে পড়া প্রিয়জনের খোঁজে ব্যাকুল হয়ে পড়েন সবাই।

যোগাযোগহীনতার এমন দুর্দিন হয়তো ফেনীবাসী আগে কল্পনাও করেনি। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, জেলার প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে জেলা প্রশাসক মুসাম্মৎ শাহীনা আক্তার নিজেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তার ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের থেকে।

তিনি বলেন, '২০ তারিখ রাত থেকে যেভাবে পানি আসা শুরু হয়েছিল, এরপর আসলে একে একে সবগুলো উপজেলার সাথে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সড়ক যোগাযোগ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎসহ সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।'

এরকম সময়ে বন্যাকবলিত ফেনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসেন সৌখিন হ্যাম রেড়িও অপারেটররা।

একজন অপারেটর বলেন, 'খাবারের অভাব, ওষুধের অভাব ছিল ওখানে। এই সবগুলো অভাব পূরণের জন্য আমাদের প্রয়োজন হয় কমিউনিকেশন করার।'

দ্রুত সময়ের মধ্যে হ্যাম রেডিও অপারেটররা গড়ে তোলেন তাদের নেটওয়ার্ক । ডিসি অফিস, আর্মি ক্যাম্প, ফিল্ড রেসকিউ টিম এবং মেডিকেল ক্যাম্পের মধ্যে তৈরি হয় আন্ত সংযোগ।

উদ্ধারকারী দলের একজন সদস্য বলেন, 'আমাদের যখন ওয়ারলেসের মাধ্যমে কমিউনিকেশন তৈরি হয়। তারপর থেকেই আমরা উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করি। বলতে গেলে ওষুধ পাঠানো থেকে শুরু করে সব কার্যক্রম এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।'

বন্যার সময় হ্যাম রেডিওর মাধ্যমে যোগাযোগ করছিলেন একজন উদ্ধারকারী। ছবি: সংগ্রহীত

উদ্ধার ও ত্রাণবাহী নৌকা দূরবর্তী স্থানে যাওয়ার সময় প্রতিটি নৌকায় একজন করে স্বেচ্ছাসেবক রেডিও অপারেটরও যাচ্ছিলেন। তিনি সবসময় ফেনী কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতেন।

এই নেটওয়ার্ক শুধু ফেনীর ভেতরে যোগাযোগ সুবিধা দেয়নি, বরং ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে মাঠে থাকা সহকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও সরবরাহ করেছে।

রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা রেডিও কন্ট্রোল রুম থেকে ঢাকায় অবস্থিত স্বজনদের থেকে তথ্য নিয়ে আটকে পড়াদের উদ্ধারের জন্য তা পাঠানো হতো ফেনীতে, সফল অপারেশন পর তা আবার জানানো হতো ঢাকার স্বজনদের।

উদ্ধারকারী দলের একজন বলেন, 'মজার ব্যাপার হলো, আমরা যখন বলতাম আমরা আপনার আত্মীয় স্বজনদের খুঁজে পেয়েছি, তারা ডিসি অফিসে আছে। ওই সময় তাদের ভেতর যে উচ্ছ্বাসটা ছিল সেটা আসলে বর্ণনা করার মতো ছিল না।'

অ্যামেচার রেডিও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার ভৌমিক বলেন, 'অ্যামেচার রেডিওর কাজটাই মূলত এখানে, দুর্যোগে সর্বপ্রথম সে এলাকায় পৌঁছে সেখান থেকে তথ্য প্রেরণ করা।'

গুটি কয়েকজনের নয় বরং এই উদ্যোগটি ছিল হ্যাম রেডিওর প্রতি ভালোবাসা ও সংযুক্ত হ্যামদের সমন্বিত প্রচেষ্টা। অ্যামেচার রেডিও নেটওয়ার্কের মধ্যে অ্যামেচার রেডিও অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, স্কাউট সদস্য, রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আরও অনেকেই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এই অপারেটরদের বেশিরভাগই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত ছিলেন।

ঘূর্ণিঝড়, বন্য, জলোচ্ছ্বাস যেকোনো দুর্যোগে একমাত্র সঠিক তথ্য প্রবাহই দিতে পারে সহজ সমাধান। তাইতো নানা পেশার এই স্বেচ্ছাসেবকরা চান তরুণ প্রজন্ম আগ্রহী হয়ে উঠুক হ্যাম চর্চায়।

এসএস