পরিবেশ ও জলবায়ু
দেশে এখন
0

বাধ ভেঙে প্রবল বেগে ঢুকছে পানি, বন্ধ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

৮ জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৯ লাখ মানুষ

ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশের ১২ জেলা। বিভিন্ন স্থানে বাধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও ফেনীর বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় বন্ধ আছে যানবাহন চলাচল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৯ লাখ মানুষ। দুর্গতদের সহায়তায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী।

ফেনী

বন্যায় ফেনী জেলার ৬টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও জেলায় ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও পানিবন্দিদের জরুরিভিত্তিতে ৭৬টি মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে ফেনীতে।

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে নগদ ৪২ লাখ টাকা, ১ হাজার ৪০০ মেট্রিকটন চাল ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জেলাটিতে।

কুমিল্লা

বন্যায় কুমিল্লা জেলার ১১টি উপজেলার ৬৪টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় মোট আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে ৫৮৭টি। এতে আশ্রয় নিয়েছে ৩৯২ জন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে নগদ ২৫ লাখ টাকা, ১ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কুমিল্লার জন্য।

কুমিল্লার গোমতী নদীতে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় পানি বেড়িবাঁধের ভেতর অবস্থান করায় বিভিন্ন স্থানে নদীর বাধ দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।

টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় উজানের ঢলে জেলার নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ১০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও জেলার আদর্শ সদর, লাকসাম, বুড়িচং, বরুড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও দাউদকান্দির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নিদারুণ কষ্টের রয়েছেন এসব এলাকার মানুষ। গোমতী নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বাসিন্দারা ইতোমধ্যে বাড়িঘর হারিয়ে সহায়-সম্বল নিয়ে পথে বসেছেন। ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় অতি প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন অনেকে। এসব এলাকার শত শত মাছের ঘের, আউশ- আমন ধানের বীজতলা এবং শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

নোয়াখালী

নোয়াখালীর ৮টি উপজেলার ৮৬টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই বন্যায়। জেলায় পানিবন্দি পরিবার রয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ২০০টি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ লাখ ২ হাজার মানুষ।

জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র আছে ৩৪৫টি। আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ হাজার ৭৫৩ জন মানুষ ও ১ হাজার ৭৯৫টি গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে।জেলাটিতে জরুরি ভিত্তিতে ৮৮টি মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে।

এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে ২৫ লাখ টাকা, ১ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।

চট্টগ্রাম

বন্যায় চট্টগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলায় পানিবন্দি আছে ২০ হাজার ১৭৫ পরিবার। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯৫ হাজার ৯০০ জন। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে ২৩২টি। যদিও চট্টগ্রামের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনও কেউ আশ্রয় গ্রহণ করেনি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে ১৫ লাখ টাকা, ১ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর সাথে ১২৭টি মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল থেকে নগরীর অভ্যন্তরীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। চট্টগ্রামের হালদা নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে, প্লাবিত হয়েছে ফটিকছড়ি।

মৌলভীবাজার

অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের ৩৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১২ হাজার ৯৬৬টি পরিবারের প্রায় এক লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। জেলার ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৪ হাজার ৩২৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এক হাজার ৬৫০টি পুকুরের ২১০ টন মাছ। এতে ক্ষতি হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে ১০ লাখ নগদ টাকা, ১ হাজার ৮৫০ মেট্রিকটন চাল ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও মৌলভীবাজারের মনু নদীর ৬টি ও ধলাই নদীর ৮টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মনু নদীর রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকালের (বুধবার, ২১ আগস্ট) সর্বোচ্চ পানির লেভেল থেকে বর্তমানে পানির লেভেল ২০ সেন্টিমিটার কম। ও চাঁদনীঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়াও ধলাই নদীর রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টেও পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি

বন্যায় খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলার ১৫ হাজার ৪২২টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এই পরিবারগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৮৭ হাজার ৭১৮ জন। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রয়েছে ১১৭টি। এতে ৭ হাজার ২৭৭ জন ছাড়াও ১ হাজার৬৯১টি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

জরুরি সেবার জন্য ১৮টি মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে খাগড়াছড়িতে। এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জেলার জন্য ৮০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দিয়েছে।

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এবং মাছুলিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় হবিগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ৫২ মিলিমিটার।

সবমিলিয়ে দেশের ৮ টি জেলায় বন্যায় প্রায় ২৯ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

tech

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর